আমাকে মারিস না, ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ফারুকনগর ইসমাইল ব্যাপারী হাইস্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরে আহত শিক্ষার্থীর নাম রবিউস সানী ওরফে শিপু (২২)। তিনি ধামসোনা ইউনিয়নের নতুনগর এলাকার বাসিন্দা এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী। তাঁকে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মারধরে অভিযুক্তরা হলেন ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মেহেদি হাসান ওরফে হিরু, কর্মী মো. রহিম এবং একই ইউনিয়নের ছাত্রলীগের কর্মী মো. শান্ত।
ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট আশুলিয়া থানা এলাকায় পেটে গুলিবিদ্ধ হন রবিউস সানী। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বাড়িতে থাকেন। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনিসহ আরও দুই বন্ধু এলাকার ফারুকনগর ইসমাইল ব্যাপারী হাইস্কুল মাঠে বসে ছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী শান্ত ও আওয়ামী লীগ কর্মী রহিম তাঁদের মাঠ থেকে চলে যেতে বলেন। একপর্যায়ে মেহেদি হাসান সেখানে উপস্থিত হয়ে রবিউস সানী ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে মারধর শুরু করেন। পরে রবিউস সানীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহত রবিউস সানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অসুস্থ। আন্দোলনের সময় আমার পেটে গুলি লাগে। বাড়ি থেকে তেমন বের হই না। রাতে এলাকার স্কুল মাঠে গেছিলাম। আমি ওই এলাকায় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। সেই ক্ষোভ থেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাকে পিটিয়েছে। আমি তাদের বলি, “আমাকে মারিস না আমার পেটে গুলি লেগেছে”। তাও ছাড়েনি ওরা।’
ঘটনা জানার পর গতকাল রাত দুইটার দিকে এনাম মেডিকেলে হাসপাতালে ভুক্তভোগীকে দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীকে মারধর করা হয়েছে। যত দিন পর্যন্ত এই আন্দোলনকারীদের মারধরে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা হবে, তত দিন মাঠে থাকবেন বলে জানান তিনি।
এনাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ইয়াসিন বলেন, রবিউস সানীর শরীরে মারধর করা হয়েছে। মারধরের ফলে তিনি কানের পর্দায় আঘাত পেয়েছেন। এ ছাড়া তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা নেই।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতেই তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনায় মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখনো তাঁরা লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ দেননি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর আইনি সহযোগিতা নিশ্চিত করা ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে মানববন্ধন
রবিউস সানীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একপাশে মানববন্ধন করেন তাঁরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা হলে আশুলিয়া থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।
মানববন্ধন সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভুক্তভোগীর মা নাদিয়া আফরোজ ও সাভার-আশুলিয়ার কয়েকজন শিক্ষার্থীও অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘যারা গণ-অভ্যুত্থানের বিরোধী ছিল, গণহত্যার পক্ষে ছিল তারা এখনো মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ কারণে গণ-অভ্যুত্থানের দুই মাস পরও একজন আন্দোলনকারীকে এভাবে মারধর করা হয়েছে। গতকাল যারা শিপুর ওপর হামলা করেছে, তাদের পরিচয় খুবই স্পষ্ট। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করে, তাহলে আশুলিয়া থানা ঘেরাও করব। গণ-হত্যাকারীদের বিপক্ষে বর্তমান সরকার এখন পর্যন্ত কোনো স্টেপ নেয়নি। যদি এই সরকার অতি দ্রুত এ ধরনের আওয়ামী-ফ্যাসিস্টয়ের দোসরদের বিচারের আওতায় না আনে তাহলে আওয়ামী ফ্যাসিস্টকে আমরা ৩৬ দিনে সরাইছি, আপনাদেরও সরিয়ে ফেলব।’
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রবিউস সানীর মা স্কুলশিক্ষিকা নাদিয়া আফরোজ বলেন, ‘আমার ছেলে রবিউস সানি ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। গতকাল রাতে তাঁর ওপর স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতকারী হামলা চালায়। সাভারের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসীরা আমার ছেলের ওপর হামলা করেছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। তাঁকে অনেক মারধর করে। আমি এই হামলাকারীদের বিচার চাই।’
মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল। তিনি বলেন, রবিউস সানী আন্দোলনে প্রথম সারির একজন নেতৃত্বদানকারী ছাত্র। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি গুলি খেয়েছেন। কয়েক দিন আগে তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দুই মাস পরে তাঁকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করার সাহস দেখিয়েছে। অতি দ্রুত তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।