বাজারে ইলিশ ও ডিমের দাম,চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ইলিশের দাম চড়া ছিল। ভারতে রপ্তানির খবরের পর ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম আরও বেড়ে গেছে, ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে এই জাতীয় মাছ। একই পরিস্থিতি ডিমের ক্ষেত্রেও; সম্প্রতি ডিমের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম ডজনে অন্তত ৫ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ফলে ‘গরিবের আমিষ’ খ্যাত ডিমও এখন সীমিত আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে।
ফার্মের মুরগির দামও বাড়ছে নানা কারণে। যদিও কিছু সপ্তাহ আগে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কমলেও টানা বৃষ্টির কারণে সেগুলোর দামও বাড়ছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের দাম বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে জানান, ভোক্তারা পরিবর্তিত সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারে অস্থিরতা কমার আশা করেছিলেন। তবে প্রথমদিকে কিছুটা স্বস্তি এলেও পরিস্থিতি আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “এখনই সময় সিন্ডিকেট ভেঙে অসাধুদের নাম প্রকাশ করে আইনে আওতায় আনা। এতে ভোক্তারা স্বস্তি পাবে এবং বাজারের বিশৃঙ্খলা দূর হবে।” তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ পণ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়েনি, ফলে ক্রেতা সাধারণ অনেক কষ্টে আছে।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে এক কেজির চেয়ে বড় সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকার উপরে। এক কেজি সাইজের ইলিশ ১,৬০০ থেকে ১,৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ (২০০-২৫০ গ্রাম) আগে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ৭০০ টাকার নিচে মিলছে না।
রাজধানীর রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা জালাল মিয়া জানান, এবার দাম শুরু থেকেই বেশি ছিল এবং ভারতে রপ্তানির খবরে তা আরও বেড়েছে। বরিশাল ও চাঁদপুরে দাম বেড়েছে এবং মোকাম থেকে ইলিশ আসছেও কম। তিনি বলেন, “এবার ইলিশের মৌসুম শেষের দিকে, আর যে কয়দিন আছে, দাম কমার সম্ভাবনা নেই।”
জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞার পর আবার ৮ মাসের জন্য জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে, ফলে এটি চলতি মৌসুমের শেষ।
এদিকে, বাজারে ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তারা বলেন, “এক কেজির ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার (১,১৮০ টাকা) দরে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। তাহলে দেশে কেন এত বেশি দাম?”
মুরগি ও ডিমের দাম ১৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, উৎপাদক পর্যায়ে ডিমের দাম ১০.৫৮ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ১১.০১ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরপরও রাজধানীর বাজারে এসব পণ্য নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল।
চলতি সপ্তাহে লাল ডিম (ফার্ম) বিক্রি হচ্ছে হালি (চারটি) ৫৫ টাকায়, এবং ডজন কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। ফার্মের মুরগির সাদা ডিমের দামও ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকার নিচে মিলছে না। খুচরা ডিম বিক্রেতাদের দাবি, বন্যার কারণে ফার্মগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই সরবরাহ কমে গেছে এবং বাজারে দাম বাড়তি।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫০০-৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে এবং অনিয়মের জন্য ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, “মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমরা পাইকারিতে ৫০০ টাকার ইলিশ খুচরা বাজারে ১,২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছি।”
এছাড়া, শুক্রবার রাজধানীর বাজারে বিভিন্ন সবজির দামও ভেদে ভিন্ন ছিল। লম্বা বেগুন এবং সাদা গোল বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, এবং কাঁচা মরিচ ২২০-২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।