শেখ হাসিনার সরকারের পতন, ভারত এখনো শেখ হাসিনা সরকারের পতন মেনে নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন লেখক-গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, এর কারণ ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক খারাপ, কেবল বাংলাদেশের ওপর তাদের প্রভাব ছিল। ভারত বাংলাদেশকে একটি ‘আশ্রিত রাজ্য’ হিসেবে বিবেচনা করত, এবং সেই নিয়ন্ত্রণ তারা হারিয়েছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই, জনগণের সরকার–সংবিধান–রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর এসব কথা বলেন। সভার আয়োজন করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল।
বদরুদ্দীন উমর আরও বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা প্রয়োজন, ভারত তা করেছে। তবে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এখন অস্বস্তিতে রয়েছে। তারা চেয়েছিল তাকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে, কিন্তু অন্য কোনো দেশ আশ্রয় না দেওয়ায় ভারতই তাকে রাখতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো এখন ভেঙে পড়েছে এবং দলটি আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের মতো আওয়ামী লীগও এখন শেষের পথে।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এবং গভীর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করে বদরুদ্দীন উমর বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে জনগণের ওপর এমন নির্যাতন এবং অত্যাচার করা হয়েছে, যার কোনো উদাহরণ নেই। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, এবং জনগণের ক্ষোভের সুযোগ না দিয়ে দমিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ ধারণাকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর নতুন কোনো রাষ্ট্র তৈরি হয়নি। গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যেসব পরিবর্তন এসেছে, তাকে স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করা অযৌক্তিক।
শেখ হাসিনার পলায়নের পর দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙা এবং তাঁর বাড়িতে (ধানমন্ডি ৩২) আগুন দেওয়া প্রসঙ্গে উমর বলেন, এই বিক্ষোভ শুধু শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না, শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনাই তাঁর বাবাকে (শেখ মুজিব) বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার সঙ্গে জড়িয়েছেন।
১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন দিবসের ছুটি বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট কেন ছুটি থাকবে? ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, আব্রাহাম লিংকনের খুনের পরেও ছুটি ছিল না। দিবস পালন করা যেতে পারে, কিন্তু জাতীয় ছুটি হওয়া উচিত নয়।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে অভিহিত করা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যে জনগণ দুবার তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে, তাঁকে কিসের জাতির পিতা বলা হবে? ১৯৭৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর কেউই তাঁর পক্ষে রাস্তায় নামেনি।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, এই সরকার শূন্যতা পূরণে এসেছে, যা না হলে সামরিক সরকার আসত। তিনি নতুন সংবিধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান সংবিধান বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না। বিএনপির নির্বাচিত হলেও সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, কারণ প্রকৃত বৈষম্যহীন সমাজ শ্রেণি সংগ্রাম ছাড়া সম্ভব নয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হিসেবে তিনি রেশনিং পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের প্রচেষ্টাকে ‘পাগলামি’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের ‘গুণ্ডামির রাজনীতি’ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, সজীব রায়, ভুলন ভৌমিক, কাজী ইকবাল এবং মাইকেল চাকমা প্রমুখ।