স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ৯ টুকরো, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী অরুণ মিয়াকে (৭০) হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে অরুণের লাশ কেটে নয় টুকরা করে পলিথিনে মোড়ানো হয় এবং ইট দিয়ে মুড়ে পাশের বাড়ির সেফটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখা হয়। এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ফরদাবাদ ইউনিয়নের ফরদাবাদ গ্রামে। নিহত অরুণ মিয়া একই গ্রামের মৃত সুরুজ বেপারীর পুত্র।
হত্যার পর স্ত্রী মোমেনা বেগম স্বামী নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রচার করেন। শুক্রবার বিকেল থেকে অরুণ মিয়া নিখোঁজ ছিলেন। চার দিন পর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পুলিশ লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মোমেনা বেগম, তার ছেলে রাসেল এবং মেয়ে লাকী আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অরুণ মিয়া প্রায় ৩৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর একই গ্রামের মোমেনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো। অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে লুৎফুর রহমান রুবেল রয়েছে এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। তাদের মধ্যে এক ছেলে দুবাইতে কাজ করতে গিয়ে মারা যায়।
২০১৭ সাল থেকে অরুণ মিয়া ছেলে লুৎফুর রহমান রুবেলের সঙ্গে গাজীপুরে বসবাস করে আসছিলেন। কয়েক মাস আগে সালিশের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হওয়ার পর থেকে তিনি গ্রামে বেশি সময় কাটাতেন। গত শুক্রবার বিকেল থেকে অরুণ মিয়া নিখোঁজ হন, যার জন্য রুবেল সোমবার বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অরুণ মিয়ার পাশের বাড়ির সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের সেফটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হতে দেখে স্থানীয়রা সন্দেহ করেন। টর্চ লাইট দিয়ে ট্যাংকের ভেতরে পলিথিন মোড়ানো কিছু বস্তু দেখতে পান। এ ব্যাপারে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে রাত ১০টার দিকে ইট দিয়ে মোড়ানো ৯টি পলিথিনের প্যাকেট উদ্ধার করে। সেগুলো খুললে বাবার লাশ সনাক্ত করে রুবেল।
নিহতের স্ত্রী মোমেনা বেগম প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত শুক্রবার বিকেলে কলহের এক পর্যায়ে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে অরুণ মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তিনি নিজেই লাশ নয় টুকরা করে পলিথিনে পেঁচিয়ে ইট দিয়ে মুড়িয়ে পাশের বাড়ির মনিরের সেফটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার পাল জানান, অরুণ মিয়া হত্যার ঘটনায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোমেনা বেগম, ছেলে রাসেল এবং মেয়ে লাকীকে আটক করা হয়েছে।