22.1 C
Los Angeles
Thursday, December 19, 2024

বিশেষ সংবাদ Featured News

৩৮ বছর ধরে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে বাস, চেরনোবিলের পথকুকুরেরা এখন ‘সুপারডগ’!

বিজ্ঞানীদের ধারণা, চেরনোবিলের বিষাক্ত পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে...

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি,আধুনিক সময়ের প্রমোদতরিগুলো...

শীতে কদর বেড়েছে খেজুর রসের

শীতে কদর বেড়েছে, আবহমান বাংলায় শীত মৌসুমে...

১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই নিভে গেল ছেলেটার জীবন

বিশেষ সংবাদ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই নিভে গেল ছেলেটার জীবন

বেঁচে থাকলে সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে ছেলেটার ১৫ বছর পূর্ণ হতো। কিন্তু তা হওয়ার আগেই ঝরে গেল ছেলেটা এ কথা বলছিলেন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ হওয়া সৈয়দ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা সৈয়দ মো. গাজীউর রহমান।

তিনি আরো বলেন, ছেলেকে যখন তালা দিয়েও বাসায় রাখতে পারছিলাম না, তখন রাগ করে বলেছিলাম, আজ বাসার বাইরে গেলে, ঘরে আর জায়গা দেব না। ছেলেও রাগ করে বলেছিল, ঠিক আছে, বাসায় আর ফিরব না। এটাই ছিল আমার সঙ্গে ছেলের শেষ কথা। এখন আফসোস হয়, কেন এমন কথা বলেছিলাম; ছেলে জীবিত অবস্থায় আর বাসায় ফিরে আসেনি; এসেছে লাশ হয়ে”—বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন এই বাবা।

তিনি বলেন, “একমাত্র সন্তানকে হাফেজ বানানোর জন্য ছোটবেলায় মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম। যদিও কোরআনে হাফেজ হতে পারেনি, মাদ্রাসা থেকে এ প্লাস পেয়ে দাখিল (এসএসসি) পাস করেছে। আলিম প্রথম বর্ষের পরীক্ষার পর আমি বললাম, চলো গ্রামের বাড়ি নাঙ্গলকোট ঘুরে আসি, কিন্তু ছেলেটা বলেছিল, বাবা আমাকে কম্পিউটার আর ইংরেজি ভাষা শিখতে কোচিংয়ে ভর্তি করে দাও।’ আমি ছেলের কথা মেনে ১০ হাজার টাকা দিয়ে কোচিংয়ে দুই বিষয়ে ভর্তি করে দিই।

কোচিং থেকে বন্ধুরা মিলে আন্দোলনে যাওয়া শুরু করে। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদসহ আরও অনেকের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর পর থেকে ছেলে গোপনে আন্দোলনে যেতে থাকে, আমরা জানতাম না। যখন জানতে পারলাম, আমি খুব চিন্তিত ছিলাম। এতগুলো শিশু আহত-নিহত হচ্ছে, আমার একমাত্র ছেলে, ‘তার যদি কিছু হয়ে যায়!’ এই আশঙ্কায় আমি তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু আলিফের বক্তব্য ছিল, মরে গেলে যাব, তবু আন্দোলনে যাব। বড় ভাইদের প্রাণ যাচ্ছে, আমি ঘরে বসে থাকব না।

৫ আগস্ট আলিফ আন্দোলনে যায়। সেদিন আমি ছেলেটিকে ঘরে তালা দিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু তারপরও সে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। রাগ করে আমি তাকে বলেছিলাম, ‘যদি বাসায় ফির না, তাহলে ঘরে আর জায়গা দেব না। ৫ আগস্ট আন্দোলনে যাওয়ার পর দুপুরে আমি জানতে পারি, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু বিকাল হলেও আলিফ বাসায় ফিরল না। তার বন্ধুদের দু-এক জনকে ফোন করে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করি। বন্ধুরা জানায়, আঙ্কেল চিন্তা করবেন না, অনেকে তো আজ শাহবাগ, গণভবনে গেছে, হয়তো আলিফও সেখানে গেছে। কিন্তু আমি বললাম, সব রাস্তা বন্ধ, সে শাহবাগে যাবে কীভাবে?

এরপর সন্ধ্যায় বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকিং হচ্ছিল—যেখানে যেখানে লাশ পড়েছিল, সেখানে বলা হচ্ছিল, এত বছর বয়সের ছেলের লাশ পাওয়া গেছে’। আমি দুই জায়গায় গিয়েছিলাম, কিন্তু আমার ছেলেটির লাশ দেখতে পাইনি। তারপর স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম, মারাত্মক আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে খোঁজ নিতে বলা হলো। ওর বন্ধুদের নিয়ে রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালের দিকে রওনা হলাম। কিন্তু সেদিন রাতে পথে ব্যারিকেড এবং গোলাগুলি চলছিল, যাত্রাবাড়ী থানা লুট হয়ে গিয়েছিল এবং সড়কে ভয়াবহ অবস্থা ছিল। আমরা যখন ঢাকা মেডিক্যাল পৌঁছাই, তখন রাত আনুমানিক ১২টা।

বাবা গাজীউর রহমান বলেন, আমার এক চাচাতো ভাই ঢাকা মেডিক্যালের ব্রাদার। তাকে ডেকে নিই। ঐদিন ঢাকা মেডিক্যালের গেট থেকে ইমার্জেন্সি পর্যন্ত রক্তে ভরা ছিল। মর্গের সামনে একটা ঘরে অসংখ্য লাশ স্তূপ করে রাখা ছিল। ঐ ঘরের মেঝেতে দাঁড়াতেই রক্তে পা ডুবে যায়। কিছু লাশের মাথায় পতাকা বাঁধা ছিল, কিছু লাশ পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ আমি দেখি, লাশের স্তূপের মধ্যে একটি হাত দেখা যাচ্ছে, গায়ে কালো টি-শার্ট। আমি ঐ ঘরের দায়িত্বে থাকা লোকদের বলি, লাশটা দেখাতে, কিন্তু তারা বলেন, আপনি কনফার্ম হলে আমরা দেখাব, তা না হলে দেখানো যাবে না। এত লাশ ওলটপালট করা যাবে না। আমি কিছুক্ষণ দেখে নিশ্চিত হই, এটাই আমার ছেলের লাশ হবে। ছেলেটি বাসায় ব্যায়াম করত, তার সুঠাম বাহু এবং সাদা পায়জামা ও কালো টি-শার্ট দেখে আমি বলি, ‘আমি কনফার্ম। ওরা মুখটা দেখাতে বলে, কিন্তু মাথায় গুলি লেগেছে। এরপর আমার ছেলের লাশ বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু লাশের গায়ে কোনো নম্বর বা অন্য কিছু ছিল না। তারা বলে, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বলার পর ওরা লাশ দেয়। অ্যাম্বুলেন্সের চালক বলেন, এত রক্তমাখা লাশ, ধুইয়ে নিয়ে যান, তা না হলে অনেকে গোসল দিতে চাইবে না। তখন ছেলের লাশ সেগুনবাগিচার কোয়ান্টামে নিয়ে যাই। সেখানে লাশকে গোসল দিয়ে কাপড় পরিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট চাওয়া হয়। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া লাশ দেওয়া হবে না। এরপর আমি বিষয়টি বুঝিয়ে বন্ডসই দিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসি। যাত্রাবাড়ীর বাসায় পৌঁছাই যখন, তখন ভোর ৪টা। সেখান থেকে আলিফের মাকে নিয়ে আমরা ভোরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট চলে যাই। জোহরের নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে ছেলেকে দাফন করি।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles