আইপিএলের দৃষ্টি কাড়তে,ভারতীয় এক সাংবাদিক খুব কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘রিশাদ হোসেন ছেলেটা কেমন?’ এমনকি রিশাদের ছোটবেলার কোচের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও চাইলেন তিনি। নীলফামারীর এই দীর্ঘদেহী লেগ স্পিনারকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকের এমন আগ্রহের কারণটা কিছুক্ষণ পরই পরিষ্কার হলো। ভারতের বিপক্ষে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো পারফর্ম করলে রিশাদকে দেখা যেতে পারে আইপিএলে। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখে আগেভাগেই তথ্য সংগ্রহ করতে চান সাংবাদিকটি। রিশাদ শুধু লেগ স্পিনারই নন, শেষের দিকে ব্যাট হাতেও ঝড় তুলতে পারেন এবং দারুণ ফিল্ডারও। আইপিএলের মতো আসরে এমন খেলোয়াড়ের চাহিদা সব সময়ই থাকে!
রিশাদ ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দলের তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, তানজিম হাসান এবং তাওহিদ হৃদয়ের দিকেও আইপিএল স্কাউটদের নজর থাকবে। তাসকিন ইতোমধ্যে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) ও জিম আফ্রো টি-টেন লিগে খেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এলপিএলে খেলেছেন শরীফুলও। তবে আইপিএল হলো ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মঞ্চ, যেখানে সব তারকা ক্রিকেটার একত্রিত হন। ভারতের এক সাংবাদিকের ভাষায়, আইপিএল হলো ‘ক্রিকেটের মেহফিল’, যেখানে দুনিয়ার প্রতিটি ক্রিকেটারের খেলার স্বপ্ন থাকে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অসাধারণ বোলিং করে রিশাদ এরই মধ্যে একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে ডাক পাচ্ছেন। জিম আফ্রো টি-টেন লিগে হারারে বোল্টস তাঁকে সরাসরি চুক্তি করেছে। এক সপ্তাহের এই ছোট্ট টুর্নামেন্ট খেলে তিনি ভারতীয় দলের বিপক্ষে খেলতে যোগ দিতে পারতেন। তবে রিশাদ চোটের ঝুঁকি নিতে চাননি, বরং ভারত সিরিজে সম্পূর্ণ সুস্থ থেকে সেরা পারফর্ম করার লক্ষ্যেই আছেন।
এর আগে কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি এবং অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগে ডাক পেয়েছেন রিশাদ। গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেটের রেকর্ড গড়ার পরই তাঁর সামনে খুলে যায় বৈশ্বিক টি-টোয়েন্টির দুয়ার। টরন্টো ন্যাশনালস তাঁকে দলে নিলেও ব্যক্তিগত কারণে ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেননি। বিশ্বকাপের দুর্দান্ত বোলিং দেখে প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে রিশাদকে দলে ভেড়ায় হোবার্ট হারিকেনস। তবে রিকি পন্টিংয়ের দলের হয়ে তাঁর বিগ ব্যাশে খেলার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। জাতীয় দলের ব্যস্ততা এবং একই সময়ে বিপিএল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিগ ব্যাশে সুযোগ পেলে রিশাদ সেখানে বেশি ম্যাচ খেলতে পারবেন বলে মনে হয় না। তরুণ এই লেগ স্পিনারের অবশ্য এতে কোনো আক্ষেপ নেই; তাঁর মূল লক্ষ্য আইপিএল।
তাসকিন ও শরীফুলকে এরই মধ্যে দুবার আইপিএলে খেলার সুযোগ হাতছানি দিয়ে গেছে। দারুণ ফর্মে থাকা এই দুই পেসার কখনো জাতীয় দলের দায়িত্ব এবং কখনো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ব্যস্ততায় আইপিএল খেলতে পারেননি। এবার সুযোগ পেলে দুজনই তা হাতছাড়া করতে চাইবেন। আর সুযোগ পাওয়ার ফর্মুলা এখন খুব সহজ—ভারতের বিপক্ষে মাঠে ভালো করলে তাদের জন্য আইপিএলের দরজা আবার খুলে যেতে পারে।
আইপিএলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন তানজিমও। বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট নেওয়া এই পেসার জিম আফ্রো এবং বিগ ব্যাশের ড্রাফটে নাম লিখিয়েছেন। যদিও দল না পেলেও তাঁর সঙ্গে কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি যোগাযোগ করেছে। ভারত সিরিজে ভালো করলে আইপিএল দলগুলোও নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
ভারত সফরের দল ঘোষণার আগে তানজিম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ক্রিকেটার হিসেবে অগ্রাধিকার দেশের ক্রিকেট। দেশের হয়ে ভালো করতে থেকে যদি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সুযোগ পাই, তাহলে অবশ্যই সেখানেও খেলতে চাইব। সেটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা হতে পারে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সব দেশের সেরা খেলোয়াড়েরা খেলে। দ্রুত অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।’
বাংলাদেশ দলের সাবেক কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন বর্তমানে আইপিএলের দল লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের হয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আইপিএলে দল পাওয়া নিয়ে তিনিও বেশ আশাবাদী। গতকাল হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় শ্রীনিবাস বলেন, ‘ভালো করলে আর আইপিএলের সময় যদি খেলার মতো অবস্থায় থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই ডাক পাবে।’
ভারতের বিপক্ষে আজ শুরু তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টির সিরিজটা তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য আইপিএলের দৃষ্টিকাড়ার সিরিজও। তবে দৃষ্টি তখনই কাড়া যাবে, যখন দেশের হয়ে ব্যাটে-বলে জ্বলে ওঠা যাবে।
সুত্র: প্রথম আলো