মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে ইলিশের দাম কমছে না, যা মৎস্য উপদেষ্টার ভাষায় ‘দামি মাছটির’ উচ্চ মূল্যের কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরবরাহের ঘাটতি।
দেশের ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছর ১লা মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখে। এই সময়ে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরা, পরিবহণ, বিক্রি ও মজুত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মে থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইলিশ ধরার মৌসুমকে ব্যবসায়ীরা ‘পিক টাইম’ হিসেবে বিবেচনা করেন।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় এই সময়ে ইলিশের সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২০২২ সালে যেখানে প্রতিদিন ১২০০ মণ ইলিশ আসত, গত বছর তা নেমে আসে ৭০০-৮০০ মণ, আর এই বছর তা মাত্র ২০০-২৫০ মণে নেমে এসেছে।
এ বছর ৪০টি ট্রলারে দাদন (অগ্রিম অর্থ) দিয়েছেন তিনি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ট্রলারই পর্যাপ্ত মাছ নিয়ে ফেরেনি। একেকটি ট্রলারে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা আদায় না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এই দাদনদাতারা কমিশন এজেন্ট হিসেবে ১০ শতাংশ অর্থ পান এবং তাদের মাধ্যমেই জেলেদের মাছ বিক্রি করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে দামের হ্রাসের কোনো সম্ভাবনা নেই। জেলে ও ট্রলারের খরচও একটি বড় কারণ। ভোলার আড়তদার মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, ১০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়।
আবদুল বারী জমাদার জানান, একেকটি ট্রলার তৈরিতে ১ থেকে ১.৫ কোটি টাকা খরচ হয়, যা ১০-১২ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য। ট্রলারের বিনিয়োগ ফেরাতে মাছের দাম উচ্চ থাকতে হয়।
মাছের বাজারের উচ্চ মূল্যের পেছনে কেউ কেউ সিন্ডিকেটের অভিযোগ করলেও, মাছ ব্যবসায়ীরা তা অস্বীকার করেছেন। আবদুল বারী জমাদার বলেন, আমরা উন্মুক্ত নিলামে মাছ বিক্রি করি, সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই। তার মতে, জেলেদের জালে পর্যাপ্ত মাছ পড়লে দাম নিজে থেকেই কমে আসবে।