11.9 C
Los Angeles
Thursday, January 2, 2025

বিশেষ সংবাদ Featured News

৩৮ বছর ধরে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে বাস, চেরনোবিলের পথকুকুরেরা এখন ‘সুপারডগ’!

বিজ্ঞানীদের ধারণা, চেরনোবিলের বিষাক্ত পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে...

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি,আধুনিক সময়ের প্রমোদতরিগুলো...

কক্সবাজারে এত সুন্দর একটা জায়গা অনাদরে পড়ে আছে

জীবনযাপনভ্রমণকক্সবাজারে এত সুন্দর একটা জায়গা অনাদরে পড়ে আছে

কক্সবাজারে এত সুন্দর, বাংলাদেশ তখন খুব উত্তাল। মিটিং, মিছিল, আন্দোলন…এই রকম একটা সময়ে একটা বিশেষ কাজে যেতে হয়েছিল কক্সবাজার। যাওয়া-আসা-থাকা, আর কাজ, সব মিলিয়ে চার দিন। গেলাম, থাকলাম, কাজও হলো, কিন্তু ফেরার সময়টা পিছিয়ে গেল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন চরম পর্যায়ে, কারফিউ জারি হয়ে গেছে।

আমরা উঠেছিলাম ওশান প্যারাডাইস হোটেলে। এই হোটেলে আগেও এসেছি কয়েকবার, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতাটা ভিন্ন। লিফটে অথবা বিচে, কিংবা রেস্টুরেন্টে, যখন যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সবার চোখেমুখে অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার মধ্যেও আন্তরিকতার ছোঁয়াটা লুকানো থাকছে না। যেমন যারা ঢাকায় ফেরার টিকিট পেয়েছে অথবা যারা পায়নি, সবার মুখেই এক কথা:

‘টিকিট পেয়েছেন?’

‘আমরা যাচ্ছি।’

‘ভালো থাকবেন।’

‘দোয়া করবেন যেন ভালোভাবে পৌঁছাই।’

খুবই সাধারণ কথা, কিন্তু পরিস্থিতির কারণে মনে হচ্ছিল এরা সবাই কত আপন, কত পরিচিত।

দরিয়ানগরে পুরোনো এক গুহা। ছবি: সংগৃহীত

হোটেলের সামনে কিছু অটোচালক থাকে, যাত্রীর আশায় অটো নিয়ে অপেক্ষা করে। তেমনি একজনের নাম রেদোয়ান। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত রেদোয়ানকেই ঠিক করলাম। বেশ হাসিখুশি, প্রাণবন্ত অল্পবয়সী একটা ছেলে। একদিন আমাদের নিয়ে গিয়েছিল অনেক দূর। কত কী যে দেখাল, যা আগে কখনো দেখিনি। ওর সঙ্গেই গেলাম দরিয়ানগর। নামটা যেমন সুন্দর, স্পটটাও তেমনি। কত শত বছরের পুরোনো এক গুহা। অবাক হয়ে গেলাম। এত সুন্দর একটা জায়গা, এমন অনাদরে পড়ে আছে! অথচ জায়গাটার একটু যত্ন নিলেই কত পর্যটক অনায়াসে আসতে পারতেন।

তবে ওখানে যাওয়ার আগে একটু ভয় ভয় লাগছিল। তখন বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা আসি আসি করছে। নির্জন জায়গা, আর আমরা মাত্র দুজন। একটু ধীর পদক্ষেপে গুহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে যখন দেখলাম শিশুসন্তান কোলে এক মা আর তাদের সঙ্গে পাঁচ কি ছয়জনের একটা গ্রুপ, তখন ভয়টা আর থাকল না। রেদোয়ান অবশ্য প্রথম থেকেই খুব উৎসাহ দিয়ে আসছিল। তারপরও জায়গাটা এমন যে ভয় একটু লাগবেই, বিশেষ করে সন্ধ্যাবেলা। সাহস করে ভেতরে গেলাম। মনে হচ্ছিল কোনো এক প্রাকৃতিক কারণে পাহাড়টা ওপর থেকে নিচ বরাবর অল্প একটু ফাঁক হয়ে দুই পাশে সরে গেছে। আর সেই ফাঁক দিয়ে পড়ন্ত বেলার সূর্যের আলো ভেতরে ঢুকে অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি তৈরি করেছে। আমরা ধীর গতিতে হেঁটে যাচ্ছি, পায়ের নিচ দিয়ে ছরার পানি বয়ে যাচ্ছে। তার সঙ্গে মিশেছে বৃষ্টির পানি, বরফ গলা নদীর মতো ঠান্ডা পানি। মাথার ওপরে টপটপ করে পড়ছে ভিজা পাহাড়ের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির পানি। শেওলা পড়া পাহাড়ের গা। আশ্চর্য এক জায়গা।

জায়গাটার একটু যত্ন নিলেই অনায়াসে পর্যটক আসতে পারতেন
জায়গাটার একটু যত্ন নিলেই অনায়াসে পর্যটক আসতে পারতেন ছবি:সংগৃহীত

আটকে পরা দিনগুলোয় প্রতিদিনই আমরা বেশ কয়েকবার করে বিচে গিয়েছি। দুটো সিট নিয়ে বসে থেকেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পাশের সিটে বসা মানুষগুলোও তখন চিন্তিত। কী হবে দেশের? কেমন করে ফিরবে সবাই যার যার গন্তব্যে?

চেনা নেই, জানা নেই কিন্তু পারস্পরিক কথাবার্তায় কোনো দ্বিধাও নেই। সেই সময়ে এই সব আলাপ মন ভরে দিয়েছিল। মনে হচ্ছিল সবাই যেন একটা পরিবার।

একটা সময়ে আমরা ঢাকা ফিরে এলাম। কিন্তু কিছু স্মৃতি রয়ে গেল মনের মণিকোঠায়। মনে পড়ে সেই হোটেল, সেই রেদোয়ান, সেই প্রাকৃতিক গুহা, রিসেপশনে কর্তব্যরত মানুষগুলো। আর সেই সঙ্গে কক্সবাজারের সেই বিচ। সেই আছড়ে পড়া ঢেউ।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles