গৃহকর্মীদের সংগ্রাম,বাসাবাড়িতে কাজ করা মহিলাদের আমরা সাধারণত বুয়া, ঝি, খালা, বা বেটি বলে থাকি, তবে প্রকৃতপক্ষে তারা গৃহপরিচারিকা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের ভিন্ন নামে ডাকা হলেও তাদের জীবন-জীবিকা ও সংগ্রাম প্রায় একই রকম। কেউ সংসারের খরচ চালাতে, আবার কেউ পারিবারিক আশ্রয় না পেয়ে অন্যের বাসায় কাজ করেন।
এই মহিলাদের কেউ কেউ বাড়ির মালিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, আবার তারাও অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হন। তবে সব ক্ষেত্রে এমনটা হয় না, কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে।
গৃহকর্মীদের সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ছুটা বুয়া এবং বান্ধা বুয়া। ছুটা বুয়ারা নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য একাধিক বাসায় কাজ করেন এবং তাদের কাজের ধরন চুক্তি অনুযায়ী হয়। অন্যদিকে, বান্ধা বুয়ারা একটি নির্দিষ্ট বাসায় সারাদিন কাজ করেন, অনেক সময় বাসায় থাকার চুক্তিও থাকে। যদিও ছুটা বুয়ারা অধিক আয় করেন, বান্ধা বুয়ারা দিনের পর দিন পরিবারের সদস্যের মতো হয়ে যান।
ঢাকাসহ সারা দেশে বান্ধা বুয়াদের বেশিরভাগই ১৮ বছরের নিচের কিশোরী বা ৪০ বছরের বেশি বয়সী মহিলা। ছুটা বুয়ার কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই এবং তারা নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন। কিন্তু বান্ধা বুয়াদের অসুস্থ অবস্থাতেও কাজ চালিয়ে যেতে হয়, ছুটি নেওয়ার সুযোগ কম থাকে।
কিশোরী গৃহকর্মীরা অনেক সময় পরিবারে নিগ্রহের শিকার হয়। সমাজের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের শেষ জীবনে একাকিত্ব ও অবহেলা বরণ করতে হয়। তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তুললেও, অনেক সময় সন্তানরা তাদের মা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। ফলে মায়েরা একাকী হয়ে পড়ে, সন্তানরা তাদের থেকে দূরে সরে যায়।
অনেক গৃহপরিচারিকার স্বামীরা কাজ না করে তাদের স্ত্রীর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিছু স্বামী মাদক, জুয়া, কিংবা নারীবাজির মতো অসামাজিক কাজের দিকে ঝুঁকে যায়। মহিলারা স্বামীদের এসব অন্যায় প্রতিহত করতে গেলে মারধরের শিকার হন। নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে পারিবারিক নির্যাতন বেশি প্রচলিত। তালাক বা আরও নির্যাতনের ভয়ে তারা সব কিছু মেনে নেন। তবুও, অনেক পুরুষ স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যায়, অথবা তাদের অকাল মৃত্যু ঘটে, যার ফলে মহিলারা একাকী হয়ে পড়েন।
যারা সারা জীবন অন্যের সুখের জন্য কাজ করেন, তাদের নিজেদের জীবনের শেষ সময়ে এসে ন্যায্য সুখও পেতে ব্যর্থ হন। তাদের আত্মীয়স্বজনও একসময় সম্পর্ক ছিন্ন করে। এভাবেই তারা একা ও নিঃসঙ্গভাবে জীবনের শেষ অধ্যায় পার করেন।