21.4 C
Los Angeles
Wednesday, November 20, 2024

বিশেষ সংবাদ Featured News

স্বচালিত ট্রাক্টর চাষাবাদে বিপ্লব ঘটাবে

স্বচালিত ট্রাক্টর, কানাডায় খামারিদের চাষাবাদে বিপ্লব ঘটাতে...

চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাজ্য

চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের,ভারত মহাসাগরে অবস্থিত সামরিক কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ চাগোস অবশেষে মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাজ্য। অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের দখলে রাখার পর এই দ্বীপটির স্বাধীনতা দিতে দেশটি সম্মত হয়েছে।

চাগোস দ্বীপ নিয়ে কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতার মাধ্যমে মরিশাস এর ফিরিয়ে পেতে চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। শিগগিরই যুক্তরাজ্য এবং মরিশাসের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিয়ে মরিশাস অনেক দেনদরবার করেছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে। চাগোস দ্বীপের মধ্যে সামরিক এবং কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছোট্ট দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়া রয়েছে। বহু বছর ধরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র গোপন চুক্তির মাধ্যমে এই দ্বীপটি নিজেদের দখলে রেখেছে। এখানে নৌসামরিক ঘাঁটি এবং দূরপাল্লার বোম্বার এয়ারক্রাফট মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগনাথ এক যৌথ ঘোষণায় বলেছেন, চাগোস দ্বীপ মরিশাসের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলা বিরোধের অবসান হতে যাচ্ছে। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি সই হবে।

জানা গেছে, চাগোস দ্বীপ মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলেও এর অন্তর্ভুক্ত ছোট ও সমৃদ্ধ দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়াতে মার্কিন ও যুক্তরাজ্যের ঘাঁটি থেকে যাবে। এই দ্বীপের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের ভূরাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভারত এবং চীনের ওপর প্রভাব বিস্তারে সুবিধা হয়।

যুক্তরাজ্য এবং মরিশাসের যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, চাগোসের স্বাধীনতা দিতে ও পাওয়ার বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছে; এখন শুধু চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের অপেক্ষা। দুই দেশ জানিয়েছে, দ্রুত একটি চুক্তি চূড়ান্ত করবে।

এই চুক্তির মাধ্যমে মরিশাসের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং তারা চাগোস দ্বীপে বসতি স্থাপন করতে পারবে। তবে দিয়েগো গার্সিয়ায় কোনো বসতি স্থাপন করতে পারবে না মরিশাস। ১৯৬৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিজেদের দখলে নিয়ে রেখেছিল এবং এখানে বসবাসরত ১,০০০ অধিবাসীকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এই ঘটনার জন্য যুক্তরাজ্য ক্ষমাও চেয়েছে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রায় দেয় যে, চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাজ্যের দখল অবৈধ। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে, যার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যকে ৬ মাসের মধ্যে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসকে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য এ নির্দেশনা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি।

চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস

চাগোস দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরের মাঝখানে প্রায় ৫৮টি ক্ষুদ্র ও অত্যন্ত নিচু দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জোয়ারের উচ্চতা এবং বালুর স্থানান্তরের সঙ্গে দ্বীপগুলোর সংখ্যা পরিবর্তিত হয়। ১৮ শতকের পর থেকে অঞ্চলটি ঔপনিবেশিক দখলে ছিল। কিছু সময়ের জন্য এটি ওলন্দাজদের এবং পরে ফরাসিদের অধীনে চলে যায়। এই সময় চাগোস দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপকভাবে নারকেল গাছ লাগানো হয়। চাগোস দ্বীপের অধিবাসীরা মূলত জোর করে আনা শ্রমিকদের বংশধর।

১৮১৪ সালে প্যারিস চুক্তি সই হলে (যা নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়) টোবাগো এবং সেন্ট লুসিয়ার মতো অন্যান্য ফরাসি উপনিবেশের সঙ্গে মরিশাসকে যুক্তরাজ্যের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬৮ সালে মরিশাস স্বাধীনতা লাভ করে, তবে স্বাধীনতার ৩ বছর আগে ১৯৬৫ সালে মরিশাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হয়।

ল্যাঙ্কাস্টার হাউস এগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, ‘ভূমির মালিকদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ এবং চাগোস দ্বীপপুঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের মূল্যের ওপরে মোট ৩ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মরিশাস সরকারকে প্রদান করা হবে।’ এই চুক্তির বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে, যখন মরিশাস দাবি করে যে, তারা চাপের মুখে পড়ে এটি সই করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস জানায়, ‘সে সময় মরিশাসের প্রতিনিধিদের প্রকৃত আইন প্রণয়ন বা নির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। এর ফলে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি করা সম্ভব ছিল না, কারণ দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা মরিশাসের জনগণের স্বাধীনতা ও মতামতের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি।’

বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাজ্য সরকার চাগোস দ্বীপপুঞ্জ এবং ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর তার সার্বভৌমত্বের দাবির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলা দুই দেশের সরকারের মধ্যে হলেও চাগোস দ্বীপের অধিবাসীদের তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরে যাওয়ার অধিকার সংক্রান্ত মামলাগুলোর সংখ্যাই বেশি।

২০০০ সালে বিভাগীয় আদালত, ২০০৬ সালে আপিল আদালত এবং ২০০৮ সালে হাউস অব লর্ডসে এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ মামলা চলে। পরে ২০১২ সালে ইউরোপীয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস; ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অব দ্য সি (আইটিএলওএস); ২০১৮ সালে আইসিজে এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

বাস্তবে, ১৯৮০ সালের দশক থেকে দ্বীপপুঞ্জের ওপর যুক্তরাজ্যের দখলের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে মরিশাস।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles