চাল আমদানির শুল্কে,দুই মাস ধরে চালের বাজার চড়া। চিকন, মাঝারি, মোটা—সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানিতে শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ৩০ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই চিঠিতে বিদ্যমান শুল্ক ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় থেকে চালের দাম বাড়তে থাকে, যা এখনো কমেনি। বর্তমানে খুচরায় মাঝারি মানের বিআর-২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে। মোটা চালের (গুটিস্বর্ণা ও চায়না ইরি) দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং চিকন মিনিকেট চালের দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। দুই মাস আগেও মোটা চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, মাঝারি চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা এবং চিকন চাল ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরে সব ধরনের চালের দাম গড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে।
শুল্ক কমানোর প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। তারা মনে করেন, এতে চাল আমদানি বাড়বে এবং বাজারে দামও কমবে। এনবিআরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি পর্যালোচনা চলছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় চিঠিতে উল্লেখ করেছে, খাদ্য নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলা এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার লক্ষ্যে চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান ও ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি মজুদে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল ও ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গমসহ মোট ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৯ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, দেশের ১৪ জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে আমন মৌসুম শেষে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এর সঙ্গে গম রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাওয়াও মূল্যবৃদ্ধির কারণ। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে মজুত বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববাজারে চালের দাম বাংলাদেশের বাজারের তুলনায় বেশি। তাই চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক (কাস্টমস ডিউটি ২৫%, রেগুলেটরি ডিউটি ২৫%, অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স ৫%, অ্যাডভান্স ট্যাক্স ৫%, ইন্স্যুরেন্স ১%, ল্যান্ডিং চার্জ ১%, ডিএফ ভ্যাট ০.৫%) ৬২.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে রেগুলেটরি ডিউটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অন্যান্য শুল্ক প্রত্যাহারেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, ভারত সম্প্রতি চাল রপ্তানিতে শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে, ফলে বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করা যাবে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।