চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায়, শহরের নিকট পেয়ারতলায় সম্প্রতি দেশীয় ফলের একটি পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। এখানে স্থানীয় উৎপাদিত বিভিন্ন ফল, যেমন ড্রাগন, মাল্টা ও পেয়ারা, ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ফল কিনছেন, যা কৃষকদের জন্য একটি সুখবর। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি টাকার ফল বেচাকেনা হচ্ছে।
বাজারের সূচনা
চলতি বছরের ১৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে পেয়ারাতলায় ফলের পাইকারি বাজারের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের দেড় মাসের মধ্যেই বাজারটি জমে উঠেছে। বর্তমানে বাজারে ২০টির মতো আড়ৎ রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন এক কোটি টাকার ফল বেচাকেনা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ভালো প্রচারণা এবং সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ফল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজারের অবস্থা ও চাহিদা
সফরকালে দেখা যায়, বাজারে ড্রাগন, মাল্টা, লেবু ও পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় এবং বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বাজার থেকে ফল কিনছেন এবং গাড়িতে লোড করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন। বর্তমানে ড্রাগন, মাল্টা, লেবু এবং পেয়ারা বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারের জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন আড়ৎ খোলার পরিকল্পনা করছেন।
কৃষকদের অভিব্যক্তি
কুন্দিপুর থেকে ফল বিক্রি করতে আসা কৃষক মহিদুল ইসলাম বলেন, “আগে আমাদের এলাকায় ফল বাজার ছিল না। ফল বিক্রির জন্য ঝিনাইদহে যেতে হতো। এখন বাড়ির কাছে বাজার হয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।” অন্য এক কৃষক জসিম জানান, “বাজারটি আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। বর্তমানে ড্রাগন ১৪০ টাকা কেজি, মাল্টা ৪০-৪২ টাকা কেজি, লেবু ৭০-৮৫ টাকা কেজি ও পেয়ারা ৩০-৩৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।”
ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া
দিনাজপুর থেকে ফল কিনতে আসা ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, “জীবননগরের ফলের চাহিদা অনেক। ফেসবুকের মাধ্যমে বাজারের খবর পেয়ে এখানে এসেছি। নতুন হলেও বাজারটি জমে উঠেছে।” শরীয়তপুরের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, এই বাজারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো এবং সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা আমাদের জন্য সুবিধাজনক।
বাজারের উদ্যোক্তাদের মন্তব্য
বাজারের উদ্যোক্তা চাষী রমজান জানান, আমাদের জীবননগর বর্তমানে ফল চাষের জন্য বিখ্যাত। আগে ঝিনাইদহে ফল বিক্রি করতে যেতে হতো, কিন্তু এখন সবকিছু এখানে পাচ্ছি। পাইকারি ফল বাজার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মো. হাসান আলী জানান, বর্তমানে ২০টির মতো আড়ৎ রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৫০ হাজার কেজি ফল কেনাবেচা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তার মন্তব্য
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বাজারের বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন অফিসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সরকারিভাবে বাজারের প্রচারের জন্য আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
এভাবে, জীবননগর উপজেলায় গড়ে ওঠা ফলের পাইকারি বাজার কৃষকদের জন্য নতুন একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং এই বাজারের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
সুত্র: বার্তা২৪