ছায়ানটের সুর ও ছন্দে,আজকের দিনের বৃষ্টিভেজা সকাল শুরু হয় শরতের গানের সুরে সুরে। দেশের অন্যতম গৌরবময় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট আয়োজন করে তাদের ঋতুভিত্তিক নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘শরতের স্নিগ্ধতা মুছে দিক মলিনতা’। এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় আজ শনিবার, ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের মিলনায়তনে।
সকালে নির্ধারিত সময়ে, ঠিক সাতটায়, কোরাস গান ও নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ‘ওগো শেফালি বনে মনের কামনা’ দিয়ে।
ছায়ানটের দর্শকদের অভিমত অনুযায়ী, তাদের এসব অনুষ্ঠানে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য থাকে না। একের পর এক পরিবেশনা স্রোতের মতো চলতে থাকে। অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় কোরাস গান, একক কণ্ঠের গান, নাচ, আবৃত্তি ও পাঠের সমন্বয়ে। সব পরিবেশনাই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম থেকে। অংশগ্রহণকারীরা শরতের শুভ্র মেঘ, কাশফুল ও নীল আকাশের প্রতিফলন ঘটিয়ে পোশাকে সেজেছিলেন।
প্রথম একক পরিবেশনা ছিল সেমন্তী মঞ্জরীর কণ্ঠে ‘আলোর অমল কমল খানি কে ফুটালে/নীল আকাশের ঘুম ছুটালে’ গানটি। এরপর দীপ্র নিশান্ত গেয়ে শোনান ‘কার বাঁশি নিশিভোরে বাজিল মোর প্রাণে’। এই বাঁশির সুর কবি রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছিল। কবির কল্পনায় ধরণি যেন অনিন্দসুন্দর হয়ে উঠেছিল শরতের শিশিরবিন্দু ও আলোর সংমিশ্রণে।
ডালিয়া আহমেদ পাঠ করেন রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেবেলার শরৎকাল’ লেখা। এভাবেই গান, নাচ, আবৃত্তি এবং পাঠের মাধ্যমে এগিয়ে যায় পুরো অনুষ্ঠানটি।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ প্রথম আলোকে জানান, ‘প্রকৃতির ঋতুসৌন্দর্য তুলে ধরে মানুষের সুকুমারবৃত্তি জাগ্রত করাই ছায়ানটের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য। তিনি আরও জানান, রবীন্দ্র সরোবরে খোলা মঞ্চে এই আয়োজন করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
ছায়ানটের এসব অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত খ্যাতনামা শিল্পীরা অংশ নেন। আজকের শরতের আয়োজনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিল্পী ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। একক পরিবেশনায় ছিলেন লাইসা আহমদ লিসা, প্রিয়াংকা ভট্টাচার্য, ফারজানা আক্তার, অমেয়া প্রতীতি, অর্ণব বড়ুয়া, সুতপা সাহা, চঞ্চল কৃষ্ণ বড়াল ও পার্থ প্রতীম রায়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশিত গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘বাজিল কাহার বীণা’, ‘শরত আলোর কমল বনে’, ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’, ‘আমার নয়ন ভুলানো এলো’, ‘আমারে ডাক দিল কে’, ‘কেন যামিনী না যেতে’, ‘এই তো তোমার প্রেম’, ‘আমার রাত পোহালো’।
‘শরৎ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী রফিকুল ইসলাম। শেষে কোরাস গানের সঙ্গে ‘আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়’ পরিবেশনার পর জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে দেড় ঘণ্টার এই মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।