দক্ষিণ আফ্রিকাকে, মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতে ১০১ রানে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল, হাতে ৭ উইকেট। মাহমুদুল হাসান ও মুশফিকুর রহিম থিতু হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াই করার আভাস দিচ্ছিলেন।
কিন্তু আগের দিনের ভালো ব্যাটিংটা আজ সকালে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সকালের সেশনে ১১ রান যোগ করতেই মাহমুদুল, মুশফিকের পর লিটন দাস আউট। বাংলাদেশ দলকে তখন ইনিংস পরাজয় চোখ রাঙানি দিচ্ছিল।
সেখান থেকে আরও একবার মেহেদী হাসান মিরাজ বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করেন। তাঁকে সঙ্গ দেন অভিষিক্ত জাকের আলী। দুজনের রেকর্ড জুটি বাংলাদেশকে এনে দেয় লিড। এরপর বৃষ্টি ও আলো স্বল্পতায় দিনের শেষ সেশনে প্রায় খেলা হয়নি বললেই চলে। তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে ৮১ রানে। ৮৭ রান করে অপরাজিত মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৬ রানে খেলছেন নাঈম হাসান।
মিরাজের নেতৃত্বে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের লড়াইয়ে মিরপুর টেস্ট জয়ের বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। দিনের খেলা শেষে স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে এসে বারবার বলে গেলেন, ‘আপনাকে তো বিশ্বাস রাখতে হবে।’
সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে ২৬ রানে ৬ উইকেটের পর বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ টেনে মুশতাক বলেন, ‘পাকিস্তান সিরিজে ২৬ রানে ৬ উইকেট থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। সবাই বিশ্বাস রাখে আমরা জিততে পারি, যেকোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারি।’
চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কত রানের লক্ষ্য দিতে চায় বাংলাদেশ—এমন প্রশ্নে মুশতাকের উত্তর, ‘যত বেশি রান করা যায়। যত লিডই হোক, আমাদের জয়ের বিশ্বাস রাখতে হবে। বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। তাই যত বেশি সম্ভব রান চাই এখন।’ কাঙ্ক্ষিত সে লক্ষ্যটা কি ২০০ রানের? ২০০?মুশতাক সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, ‘২০০ রান, কেন নয়?’
এরপর আরও একবার রাওয়ালপিন্ডিতে লিটন-মিরাজের সেই অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টানলেন তিনি, ‘২৬/৬ থেকে আমরা টেস্ট জিতেছি। এই বিশ্বাস রাখতে হবে। আমরা এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দেই। আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, দল হিসেবে বিশ্বাস রাখলে, প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে যেকোনো পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে অন্য এক প্রশ্নেও একই কথা বলেছেন মুশতাক, ‘তৃতীয়বারের মতো বলছি, ২৬/৬ থেকে ম্যাচ জিতেছি। ইনশা আল্লাহ এই ম্যাচও জিততে পারে। এই বিশ্বাসটাই শুধু রাখতে হবে। বিশ্বাস হলো সেই জিনিস, আপনি জানেন কোন প্রক্রিয়ায় জিততে হবে এবং হাল ছেড়ে দেবেন না। তাইজুল দারুণ ব্যাট করেছে। ১৬ রানের মতো করেছে। এটাই লড়াই। হাল ছাড়া যাবে না। মানুষ যেন তোমাকে নিয়ে আশা করতে পারে।’
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলেও মুশতাক ইতিবাচক থাকতে চাইলেন, ‘টপ অর্ডার নিয়ে একটু চিন্তার বিষয় আছে। তবে এভাবে ম্যাচ জিততে থাকলে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যেও বিশ্বাস চলে আসে। টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য হলো ঘুরে দাঁড়ানো। যেকোনো ম্যাচে, যেকোনো দলের লোয়ার অর্ডার যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন প্রতিপক্ষ ঘাবড়ে যায়। আমার মনে হয় এটা দারুণ লক্ষণ। দ্রুতই বা কিছুদিন পর দেখবেন, এই ছেলেরা বিশ্বের যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাবে।’