দিল্লিতে বৈঠকে মুইজ্জুকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহম্মদ মুইজ্জু উভয়েই একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আজ সোমবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুজনেই শতাব্দীপ্রাচীন সম্পর্কের গভীরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনেও দুই দেশ ভবিষ্যৎ প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারত সব সময় মালদ্বীপের পাশে থেকেছে। অর্থনৈতিক বা চিকিৎসা-সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে সবার আগে সাড়া দিয়েছে, এগিয়ে গেছে। কোভিডের সময় ছয় লাখ জনসাধারণকে প্রতিষেধক সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতেও ভারত এই ভূমিকা পালন করবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, মালদ্বীপ ভারতের বরাবরের বন্ধু। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে নিরাপদ রাখায় মালদ্বীপের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম নীতি’ ও ‘সাগর’ (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর করার ক্ষেত্রেও মালদ্বীপের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
হায়দরাবাদ হাউসে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর মুইজ্জুও বলেন, ভারত তাদের এক মূল্যবান বন্ধু। আর্থসামাজিক ক্ষেত্র, অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়াও সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োজনে ভারত সব সময় মালদ্বীপের সঙ্গে থেকেছে। এই সহযোগিতার কারণে মুইজ্জু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ দেন।
পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মুইজ্জু সস্ত্রীক দিল্লি আসেন গতকাল রোববার। সেদিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। দুজনে এক দফা আলোচনাও হয়। সোমবার সকালে মুইজ্জু যান রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। তারপর প্রথানুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা জানানো হয়। দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বেলা একটায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুইজ্জু। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের অভিমুখে ছিল ভারত বিরোধিতা। তাঁর নির্বাচনী স্লোগানই ছিল ‘আউট ইন্ডিয়া’। চীনপন্থী বলে পরিচিত এই নেতা জয়ের পর প্রথামাফিক প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে না এসে বেছে নিয়েছিলেন তুরস্ক। তারপর তিনি যান চীন। জেতার পরেই তিনি মালদ্বীপে অবস্থানরত ৮৮ ভারতীয় সেনাকে ফেরত যাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন। ভারত সেই দাবি মেনে সেনা সরিয়ে নেয়। যদিও তার আগে থেকেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে মুইজ্জু সচেষ্ট হন।
মোদির তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুইজ্জু উপস্থিত হন। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমিরও ভারত সফর করেন। আগস্টে মালদ্বীপে যান জয়শঙ্কর। সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছিল আগে থেকেই। মুইজ্জুর সফর, মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, বিভিন্ন চুক্তি সই সম্পর্কের সেই আড়ষ্টতা বহুলাংশে কাটিয়ে দিয়েছে।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর আগেই মুইজ্জু সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলার সদিচ্ছার বার্তা জানিয়ে দেন। এক সর্বভারতীয় বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোমবার তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের চিরকালীন বন্ধু ভারত। পারস্পরিক সহযোগিতা এই সম্পর্কের ভিত। বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্য অনেক দেশের সঙ্গেই মালদ্বীপের সম্পর্ক আছে; কিন্তু আমাদের কোনো কাজে যাতে ভারতের ক্ষতি না হয়, সেদিকে আমরা সব সময় দৃষ্টি রাখি।’
আজ সোমবার মোদি ও মুইজ্জু মালদ্বীপের হানিমাধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন রানওয়ের উদ্বোধন করেন। মুইজ্জুকে মোদি বলেন, মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বাড়াবে গ্রেটার মালে কানেকটিভিটি প্রকল্প। থিলাফুশিতে নতুন বাণিজ্যিক বন্দর তৈরিতে সাহায্য করার কথাও মোদি জানিয়ে দেন। তৈরি করে দেওয়া ৭০০ বাড়ি মালদ্বীপকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। দুই নেতাই জানিয়ে দেন, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দুই দেশ শিগগিরই আলোচনা শুরু করবে।
আজ সোমবার মোদি ও মুইজ্জু মালদ্বীপে রুপে কার্ড চালু করেন। স্বাক্ষরিত হয় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি। মালদ্বীপের অর্থনীতিকে চাঙা করতে এই চুক্তি সহায়ক হবে। আগামী বছর মোদিকে মালদ্বীপ সফরের আমন্ত্রণও জানান মুইজ্জু।
সুত্র: প্রথম আলো