প্রকাশ্য রাস্তায় শুধু অন্তর্বাস, ইরানের কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদে অন্তর্বাস পরে রাস্তায় নেমেছিলেন। পুলিশ তুলে নিয়ে যায় তাঁকে। তিনি কোথায় রয়েছেন, তা এখনও অজানা। সংবাদ সংস্থা এএফপি সূত্রে খবর, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তেহরানের ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ওই তরুণী। তাঁর নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। শনিবার একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল (যার সত্যতা যাচাই করা যায়নি)।ওই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন তিনি। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি জায়গায় গিয়ে বসে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একাই ‘নীরব প্রতিবাদ’ জারি রেখেছিলেন। আশপাশে যে মহিলাদের দেখা গিয়েছে, সকলেরই মাথায় হিজাব, শরীর আপাদমস্তক আবৃত। কিছু ক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীদের ওই তরুণীকে আটক করতে দেখা যায়। এর পর থেকে আর কোনও খবর পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর। পরে জানা যায়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাঁকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, গ্রেফতারির পর কোথায় রাখা হয়েছে তরুণীকে, তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন— কিছুই স্পষ্ট নয়। যা নিয়ে বিশ্ববাসীর মনে আবারও উদ্বেগ দানা বেঁধেছে। আবারও মনে পড়ে যাচ্ছে ইরানের মাহসা আমিনির কথা।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। হিজাব না পরে রাস্তায় বার হয়েছিলেন ইরানের তরুণী মাহসা আমিনি। সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়। ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ইরানি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ঘটনার পর বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। মাহসার রহস্যমৃত্যুর সবে দু’বছর পেরিয়েছে। এরই মধ্যে তেহরানের ঘটনার পর ইরানে নারী স্বাধীনতা নিয়ে আবারও বিশ্ব জুড়ে ধ্বনিত হতে শুরু করেছে প্রতিবাদের স্বর।
ইরানে মহিলাদের জন্য কড়া পোশাকবিধি রয়েছে। সে দেশে মহিলাদের আবশ্যিক ভাবে মাথা ঢেকে রাখতে হয় হিজাবে। রাস্তায় বার হলে সবসময় ঢিলেঢালা পোশাক পরার নিয়ম। ইরানের প্রাক্তন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনির পর বর্তমান ধর্মগুরু আলি খামেনেইও এই ফতোয়া জারি রেখেছেন। তা ভাঙলে কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে সে দেশে।
মাহসাকাণ্ডের পর প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল চারদিকে। ইরানি মহিলারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। হিজাব ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন তাঁরা। এই প্রতিবাদও কড়া হাতে দমন করেছিল ইরান-প্রশাসন। ধর্মীয় ফতোয়া অবমাননা করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল বহু বিক্ষোভকারীর। পরে হিজাব আইন আরও কড়া হয়েছে। আগে হিজাব আইন ভাঙলে ১০ দিন থেকে দু’মাস পর্যন্ত জেল-সহ আর্থিক জরিমানা হত। মাহসাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী প্রতিবাদের পর, সেই মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৫ থেকে ১০ বছর কারাদণ্ডের বিল পাশ করা হয় ইরানে। হিজাব-বিধি না মানলে ভারতীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ ৭ লক্ষ টাকা জরিমানাও হতে পারে।
শনিবার ঠিক কী কারণে ওই তরুণী প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ইরানের বাইরের একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বাসিজ প্যারামিলিটারি ফোর্সের সদস্যেরা তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন। তাঁর হিজাব ও পোশাক ছিঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এর পরেই তিনি প্রতিবাদ হিসাবে পোশাক ছেড়ে অন্তর্বাস পরেই ক্যাম্পাসে হাঁটতে শুরু করেন।
যদিও এই হেনস্থার অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি ইরানের প্রশাসনের তরফে। তবে ইরানের কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই তরুণী পোশাকবিধি না মেনেই ক্লাসে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে পোশাকবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করেন। এর পরেই ওই ছাত্রী পোশাক খুলে ফেলেন।
শনিবারের ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে সরব হয়েছে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সুত্র: আনন্দবাজার