ভারতের আপত্তি,ভারত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে যাবে না, পাকিস্তানও ‘হাইব্রিড মডেলে’ টুর্নামেন্ট করতে রাজি নয়। আগামী বছর ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটি তাহলে হবে কীভাবে?
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে এই যে জটিলতা, সেই বিষয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি), কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি।
খোঁজখবর যা জানা যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম থেকে। বিসিসিআই নাকি আইসিসিকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছে, তারা পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাবে না। আইসিসি সেই চিঠির কথা আবার জানিয়েছে পিসিবিকে। চিঠি পেয়ে পিসিবি আবার আইসিসির কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
সর্বশেষ খবর, আইসিসি পিসিবির সেই চিঠির ভিত্তিতে কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছে বিসিসিআইয়ের কাছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ভাগ্য তাই আপাতত ঝুলে আছে এই চিঠি চালাচালির মধ্যেই।
পাকিস্তানের জিও টেলিভিশনের ওয়েবসাইট জিও সুপার-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইসিসিকে লেখা চিঠিতে পিসিবি বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিসিসিআই কখন আইসিসিকে জানিয়েছে যে তারা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে দল পাঠাবে না।
এটা যদি ভারতের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তাহলে এর পেছনে তারা কী কারণ দেখিয়েছে। পিসিবি আইসিসিকে পাঠানো বিসিসিআইয়ের সেই চিঠির প্রতিলিপি দেখতে চায়, যাতে তারা নিজেরা এর একটা পর্যালোচনা করতে পারে। বিসিসিআইয়ের চিঠির জবাবে আইসিসি কী লিখেছে, বা আদৌ কোনো জবাব দিয়েছে কি না, সেটাও পিসিবি জানতে চায়।
পিসিবির একটি সূত্র জিও সুপারকে জানিয়েছে, আইসিসির কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে তারপর পিসিবি এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া বা পাকিস্তান সরকারের পরামর্শ চাওয়ার কথা ভাববে।
সূত্র এটাও জানিয়েছে, ভারত যদি সত্যিই পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে রাজি না হয়ে থাকে, এবং আইসিসি সেটা মেনে নিয়ে থাকে, তাহলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি যেখানে বা যেভাবেই হোক, তাতে পাকিস্তান ভারতের বিপক্ষে কোনো ম্যাচ খেলবে না। যদিও এ রকম একটি টুর্নামেন্টে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ না হওয়া মানে আইসিসির বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়া।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর, আইসিসি এশিয়া কাপের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও হাইব্রিড মডেলে করতে চায়, যেখানে পাকিস্তানেই মূল টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো হবে, আর ভারতের ম্যাচগুলো হবে অন্য কোনো দেশে। আইসিসির আরেকটি বিকল্প ভাবনা হচ্ছে, আয়োজক হিসেবে পাকিস্তানকে রেখে পুরো টুর্নামেন্টই অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়া। সেই দেশটা দক্ষিণ আফ্রিকা হতে পারে বলেও গুঞ্জন আছে।
তবে পিসিবি সূত্রের দাবি, পাকিস্তান রাজি না হলে আইসিসির পক্ষে এই টুর্নামেন্ট হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করা আইসিসির জন্য কঠিন। আয়োজক দেশের অনুমতি ছাড়া টুর্নামেন্ট হাইব্রিড মডেলে আয়োজন করা বা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।
পিসিবির সেই সূত্র উদাহরণ হিসেবে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা বলেছে, ‘যদি ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা আপনাদের মনে থেকে থাকে, যুক্তরাজ্য সরকার জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের রাজনৈতিক কারণে ভিসা দিতে আপত্তি করেছিল। কিন্তু তখন পুরো টুর্নামেন্ট ইংল্যান্ড থেকে সরিয়ে নেওয়ার বদলে আইসিসি একটি মধ্যপন্থা বের করেছিল। যার ফলে জিম্বাবুয়ে টুর্নামেন্ট থেকে নিজেরাই নাম প্রত্যাহার করে নেয় এবং তাদের বদলে স্কটল্যান্ড অংশ নেয়। এতে বোঝা যায়, যৌক্তিক কারণ ছাড়া মূল আয়োজকদের বাদ দিয়ে টুর্নামেন্ট অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া আইসিসির জন্য মোটেও সহজ নয় এবং শুধু একটি দেশের নির্দেশে তো নয়ই।’
এদিকে ক্রিকেট পাকিস্তানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু আইসিসি নয়, এ ব্যাপারে অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করছে পিসিবি। ভারতের অবস্থানের ব্যাপারে পিসিবি অন্য বোর্ডগুলোর মতামতও জানতে চায়।
সব মিলিয়ে আইসিসি পড়েছে জটিল এক পরিস্থিতিতে। ক্রিকেট পাকিস্তানের ওই প্রতিবেদনেই দাবি করা হয়েছে, পিসিবি যেসব বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছে, বিসিসিআইয়ের কাছ থেকে ব্যাখ্যা নিয়েই সেগুলোর জবাব দেবে আইসিসি। এ ছাড়া সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে, সেটা বোঝার জন্য অন্য বোর্ডগুলোরও পরামর্শ চাইবে আইসিসি।
সূচি অনুযায়ী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু হতে আর তিন মাসের মতো বাকি। এরই মধ্যে পিসিবি আয়োজক হিসেবে বেশ কিছু প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে। সুতরাং বিকল্প কোনো সমাধান বের করতে হলে আইসিসিকে আসলে খুব দ্রুতই সেটা করতে হবে।