16.4 C
Los Angeles
Wednesday, December 18, 2024

বিশেষ সংবাদ Featured News

৩৮ বছর ধরে বিষাক্ত তেজস্ক্রিয়তার মধ্যে বাস, চেরনোবিলের পথকুকুরেরা এখন ‘সুপারডগ’!

বিজ্ঞানীদের ধারণা, চেরনোবিলের বিষাক্ত পরিবেশে মানিয়ে নিয়েছে...

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ প্রমোদতরি,আধুনিক সময়ের প্রমোদতরিগুলো...

শীতে কদর বেড়েছে খেজুর রসের

শীতে কদর বেড়েছে, আবহমান বাংলায় শীত মৌসুমে...

মানুষ মারার কসাইখানা! অকথ্য অত্যাচার, ধর্ষণ, শেষে ফাঁসি, কী না চলত সিরিয়ার কুখ্যাত জেলে!

আন্তর্জাতিকমানুষ মারার কসাইখানা! অকথ্য অত্যাচার, ধর্ষণ, শেষে ফাঁসি, কী না চলত সিরিয়ার কুখ্যাত জেলে!

অত্যাচারের সময় মুখ বেঁধে রাখা হত বন্দিদের। পর্যাপ্ত খাবার, জল, ওষুধ— কিছুই জুটত না। কখনও কখনও এক বন্দিকে দিয়ে আর এক বন্দিকে ধর্ষণ করানো হত। কী চলত সৈদনায়ার চার দেওয়ালের আড়ালে?

মানুষ মারার কসাইখানা, সিরিয়ায় সরকার পতনের পরেই খুলে দেওয়া হয়েছে কুখ্যাত কারাগার সৈদনায়ার ফটক! ছাড়া পেয়েছেন বছরের পর বছর ধরে বন্দি হয়ে থাকা কয়েদিরা। কী এই সৈদনায়া? কী চলত সেই ‘বধ্যভূমি’র চার দেওয়ালের আড়ালে? ফিরে দেখা যাক ইতিহাস।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে একের পর এক গুম-খুন এবং অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সিরিয়ার এই কারাগারে। ইংল্যান্ডের সিরিয়ান অবজ়ারভেটরি ফর হিউম্যান রাইট্‌স-এর ২০২১ সালের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সিরিয়ার জেলগুলিতে এক লক্ষেরও বেশি বন্দির মৃত্যুদণ্ড কিংবা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৩০,০০০-রও বেশি বন্দি সৈদনায়ার!

সৈদনায়া কারাগারের উপগ্রহ চিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন থেকেই জানা গিয়েছে, সৈদনায়ার চৌহদ্দির মধ্যে রয়েছে দু’টি পৃথক জেল। একটি লাল এবং একটি সাদা রঙের ভবন। লাল রঙের ভবনে রাখা হত সাধারণ নাগরিকদের। আর সাদা রঙের ভবনে থাকতেন সামরিক ও রাজনৈতিক বন্দিরা। আল-কাবুনের মিলিটারি ফিল্ড কোর্টে নামমাত্র বিচারের পর ফাঁসির সাজা শোনানো হত লাল ভবনের বন্দিদের। ‘বিচারপ্রক্রিয়া’ শেষ হয়ে যেত মাত্র এক থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই। যে দিন এক এক জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হত, সেই দিনটিকে ‘পার্টি’ বলে অভিহিত করতেন কারারক্ষীরা। কখনও কখনও আবার ‘গণফাঁসি’-রও আয়োজন করা হত। তালিকায় নাম থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের এক এক করে নিয়ে আসা হত লাল ভবনের বেসমেন্টের একটি গোপন কক্ষে। সেখানে দু’তিন ঘণ্টা ধরে চলত অকথ্য অত্যাচার, মারধর। তার পর গভীর রাতে চোখ বেঁধে বন্দিদের নিয়ে যাওয়া হত সাদা ভবনের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে। সেখানেই একসঙ্গে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হত তাঁদের।

প্রতি সপ্তাহে এক কিংবা দু’বার এই ‘পার্টি’ হত। প্রতি ‘পার্টি’-র রাতে ফাঁসি হত ২০ থেকে ৫০ জন কয়েদির। তবে এই ‘পার্টি’-র বিষয়ে ঘুণাক্ষরেও জানতে পারতেন না বন্দিদের কেউ। ফাঁসির মাত্র মিনিটখানেক আগে তাঁদের জানানো হত, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাঁদের! এমনকি, লাল ভবনের কারারক্ষীরাও জানতে পারতেন না, গভীর রাতে সাদা ভবনে নিয়ে যাওয়ার পর বন্দিদের সঙ্গে কী হয়। ফাঁসির পর মৃতদেহগুলি ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হত তিশরিন হাসপাতালে। সেখানে নামপরিচয় নথিভুক্তকরণের পর গণকবর দেওয়া হত দেহগুলিকে। অ্যামনেস্টির দাবি, ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার বন্দিকে বিনা বিচারে এ ভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে সৈদনায়ায়।

সৈদনায়ায় বন্দিদের উপর অত্যাচারের ইতিহাসও কম নয়। বন্দিদের নির্বিচারে মারধরের পাশাপাশি চলত যৌন নির্যাতনও। কখনও কখনও এক বন্দিকে দিয়ে আর এক বন্দিকে ধর্ষণ করানো হত। এর পাশাপাশি, পর্যাপ্ত খাবার, জল, ওষুধ— কিছুই জুটত না। অত্যাচারের সময় মুখ বেঁধে রাখা হত বন্দিদের। অকথ্য অত্যাচারের ফলে কোনও কোনও বন্দি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতেন। রবিবারই সৈদনায়া থেকে মুক্তি পাওয়া এক বন্দির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে (যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তাতে দেখা যাচ্ছে, সৈদনায়ার বাইরে রাস্তার ধারে গায়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে বসে রয়েছেন শীর্ণ এক যুবক। কথাবার্তা অসংলগ্ন। অত্যাচারের চোটে ভুলেছেন নাম-ঠিকানাও। ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আসার পরেই ফের এক দফা চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সিরিয়ার কুখ্যাত এই জেল নিয়ে।

সৈদনায়ার ফটক খুলতেই উচ্ছ্বাস শুরু হয়ে গিয়েছে সে দেশে। তবে সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইট্‌স-এর প্রতিষ্ঠাতা ফাদেল আবদুলঘানি জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি নিয়ে এ উচ্ছ্বাস স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি সব ধরনের বন্দিরা মুক্তি পেলে তা দুশ্চিন্তারও কারণ বইকি!

উল্লেখ্য, সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র দুই গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনীর আগ্রাসনে পিছু হটেছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার। দেশ ছেড়েছেন আসাদ। রাজধানী দামাস্কাসের পাশাপাশি একের পর এক শহর চলে গিয়েছে বিদ্রোহীদের দখলে। দামাস্কাসকে ‘স্বাধীন’ বলে ঘোষণা করেছে সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। কাতারের দোহায় সিরিয়ার দূতাবাসে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘স্বাধীনতা’ উদ্‌যাপন। প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালিও জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতার হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। তবে তা হোক শান্তিপূর্ণ ভাবে। গত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। সেখানে যুযুধান বেশ কয়েকটি পক্ষ। ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিতে শুরু করেছিল আমেরিকা। পরবর্তী সময়ে আইএস জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত রুখতে পূর্ব সিরিয়ার ডেইর আজ-জাওয়ার প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্বের হাসাকা-সহ বিভিন্ন এলাকায় সেনা মোতায়েন করেছিল পেন্টাগন।

সুত্র: আনন্দবাজার

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles