মুক্তির পথ বেছে নিয়েছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ,অবাস্তবায়নযোগ্য ন্যায়বিচারের’ বদলে মুক্তি বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত থেকে মুক্তি পেতে তিনি সাংবাদিকতার জন্য দোষ স্বীকার করেছেন।
মুক্তির পর আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে এসে তিনি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়।
আজ মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে ইউরোপের অধিকার সংস্থা পার্লামেন্টারি অ্যাসেম্বলি অব দ্য কাউন্সিল অব ইউরোপের (পিএসিই) প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাসাঞ্জ। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের তাঁদের কাজ করার জন্য বিচার করা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়; এটি একটি মুক্ত ও সচেতন সমাজের স্তম্ভ।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেন, সাংবাদিকতা করার জন্য দোষ স্বীকার করার পর দীর্ঘ কারাভোগের জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন একটি অন্ধকার মোড়ের দিকে চলে যাচ্ছে।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি পান মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। নিজের অপরাধ স্বীকার করে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতায় তাঁকে ছেড়ে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। মুক্তির পর থেকে তিনি জনসমক্ষে কোনো মন্তব্য করেননি।
আজ প্রথম জনসমক্ষে এসে অ্যাসাঞ্জ বলেন, “আমি আজ মুক্ত নই, কারণ এখনো সেই সিস্টেম কাজ করছে। কিন্তু সাংবাদিকতার জন্য দোষ স্বীকার করেছি বলে বছরের পর বছর কারাভোগের পর আজ মুক্ত।”
এদিকে, পিএসিইর পক্ষ থেকে অ্যাসাঞ্জের প্রতি করা আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে মানবাধিকারের চরম অবমাননার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁর জীবনের ১৪ বছর লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে, অথবা বেলমার্শ কারাগারে থাকতে হয়েছে। যুক্তরাজ্য ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষাবিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকা।
কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অনেক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হইচই ফেলে দেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। গ্রেপ্তার এড়াতে একপর্যায়ে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন এবং সেখানে প্রায় সাত বছর কাটান। মুক্তি পেয়ে অ্যাসাঞ্জ মাতৃভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ফেরেন এবং এরপর থেকে তিনি মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫ বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে অ্যাসাঞ্জ বলেন, আমি অবশেষে অবাস্তবায়নযোগ্য ন্যায়বিচারের বদলে মুক্তি বেছে নিয়েছি। আমার জন্য ন্যায়বিচার এখন বন্ধ।