দায়িত্ব নিয়ে খুব বেশি দম ফেলার ফুরসত নেই অন্তবর্তীকালীন সরকারের। অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপের তালিকা করা হলে, সেটার শেষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বলা মুশকিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, ভঙ্গুর অর্থনীতির উন্নতি এবং দুর্নীতিবাজদের আইনের মুখোমুখি নিশ্চিত করা। এসব জটিল বিষয়ের মধ্যে আরেক জটিলতা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে বাংলাদেশের প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন৷ এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান৷
ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে এবং তাদেরকে নিরাপদে, মর্যাদার সাথে এবং পূর্ণ অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷
একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদেরকে দ্রুত তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনে করার কথাও বলেছেন ড. ইউনূস৷
বর্তমান পরিস্থিতি কী বলছে?
রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েকশ’র বেশি নয়৷ তাই যুক্তরাষ্ট্র বড় পরিসরে রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে সবচেয়ে দাতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সহায়তার জন্য বড় পরিসরে আহ্বান জানাতে পারেন৷
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসলেও ইউরোপে পুনর্বাসনের সুযোগ কম দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য ইউরোপ অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে৷
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ থাকলেও অনেকেই মনে করেন, এই রোহিঙ্গা সংকটের প্রকৃত সমাধান হতে পারে তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো৷ যদিও দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, এটি এই মুহূর্তে সম্ভব নয়৷
২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হামলার মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ এরপর ২০২১ সালে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান হলে আবারো বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন বাড়তে থাকে৷ সম্প্রতি রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে বাংলাদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি৷
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের বাইরে ভারত, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে প্রায় তিন লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন৷