হাঁটা উপকারী— সে কথা বহু বার শুনেছেন। উপকারের দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনে হাঁটাহাঁটি শুরুও করেছেন। কিন্তু প্রতি বারই মাঝপথে থমকে গিয়েছে রুটিন। বন্ধ হয়েছে হাঁটাহাঁটি।
শুধু ভোরে নয়,সকালে জল দিয়ে একটি বড়ি ঢোঁক গিলে খেয়ে ফেললেই আপনি ফিট! কোলেস্টেরল, সুগার, প্রেসার, গাঁটের ব্যথা, ‘গাট’ অর্থাৎ অন্ত্রের স্বাস্থ্য, হজমক্রিয়া— সব থাকবে নিয়ন্ত্রণে। ফলত বাড়বে না ওজনও। ভাবতে পারছেন, হাতের কাছে এমন একটি ‘বড়ি’ পেলে কী হবে? সত্যিটা হল, ওই ‘জাদু বড়ি’ হাতের কাছেই আছে। তার জন্য কোনও মূল্যও দিতে হবে না। বিনামূল্যের সেই ‘জাদু সমাধান’-এর নাম হল হাঁটা। বিকল্প ওষুধ নিয়ে গবেষণারত বিজয় ঠক্কর একটি জাতীয় স্তরের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিখেছেন, শুধু হেঁটেই সুস্বাস্থ্যের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলা যায়।
হাঁটাই যখন ওষুধ
হাঁটা উপকারী— সে কথা বহু বার শুনেছেন। উপকারের দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনে হাঁটাহাঁটি শুরুও করেছেন। কিন্তু প্রতি বারই মাঝ পথে থমকে গিয়েছে রুটিন। বন্ধ হয়েছে হাঁটাহাঁটি। আসলে হাঁটার রুটিনে একঘেয়েমি আসে দ্রুত। তার কারণ, ঝট করে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন দেখা যায় না। হয়তো এক মাস টানা হাঁটাহাঁটি করার পরও নিজের চেহারায় তেমন পরিবর্তন দেখতে পেলেন না। ফলে হতাশা এল। মোটিভেশন বা প্রেরণার অভাবে হাঁটাই ছেড়ে দিলেন। যাঁরা হাঁটেন বা যাঁরা হাটেন না, তাঁদের উজ্জীবিত করতে বিজয় একটি গবেষণালব্ধ তথ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যে তথ্য হাঁটাহাঁটির অভ্যাসে প্রয়োজনীয় প্রেরণা জোগাতে পারে।
গবেষণালব্ধ ওই তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছিল চিকিৎসা সংক্রান্ত আমেরিকার একটি পত্রিকা জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (জামা)-এ। গবেষকেরা সেখানে বলছেন, প্রতি দিন যদি কেউ ৭০০০ থেকে ১০০০০ পা হাঁটতে পারেন, তবে তাঁদের অসুস্থতাজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি ৭২ শতাংশ কমে যায়। ছোটখাটো গবেষণা নয়, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২১১০ জনের স্বাস্থ্য এবং হাঁটার অভ্যাসের উপর নিয়মিত নজর রেখে ওই সিদ্ধান্তে উপনীত হন গবেষকেরা। তাঁরা এ-ও বলেন যে, হাঁটার যে সুফলের কথা তাঁরা বলছেন, তা বয়স, ওজন, জীবনযাপনের নানা সমস্যার নিরিখে যে কেউ পেতে পারেন।
বিজ্ঞান কী বলছে?
কেন হাঁটলে এত উপকার? তার জবাব লুকিয়ে আমাদের পেশিতে। বিজয় জানাচ্ছেন, দৈনন্দিন কায়িক শ্রমের সময় যখন বিভিন্ন পেশি সঙ্কোচন-প্রসারণ হয়, তখন শরীরে একটি এনজ়াইম সক্রিয় হয়। ওই এনজ়াইমের নাম হল ‘অ্যাডিনোসিন মোনোফসফেট অ্যাক্টিভেটেড প্রোটিন কিনাসে’ বা এএমপিকে। শরীরে যখন এএমপিকে সক্রিয় হয়, তখন প্রথমে আমাদের খাবার থেকে সংগ্রহ করা শক্তি পেশিতে পৌঁছয়। আর পেশি ওই খাবারের শক্তিকে শারীরিক শক্তিতে বদলে দেয়। এই গোটা প্রক্রিয়াটি যদি সুসম্পন্ন না হয়, তবে খাবার থেকে যে শক্তি শরীর গ্রহণ করেছিল, তা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং পরে শরীরে মেদ হিসাবে জমা হয়। যা থেকে স্থূলত্ব, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ, লিভারের অসুখের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভোরে উঠে হাঁটাহাঁটি?
হাঁটাহাঁটির অভ্যাস বজায় রাখতে না পারার একটি বড় কারণ হল তার সঙ্গে জুড়ে থাকা কয়েকটি প্রচলিত ধারণা। অনেকেই মনে করেন সকালে উঠে হাঁটাহাঁটি করলেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কেউ আবার মনে করেন, এক বারেই সারা দিনের প্রয়োজনীয় ৭০০০ পা হেঁটে ফেলবেন। এতে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে শরীর এবং মন দুই-ই বেঁকে বসে। বিজয় জানাচ্ছেন, দৈনিক ৭-১০ হাজার পা হাঁটার মধ্যে সারাদিনের হাঁটাহাঁটিও থাকে। তাই সকালে উঠে একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটলেই কাজ হবে এমন নয়। বরং সারা দিনের কাজের মাঝে যদি হাঁটাহাঁটি বা কায়িক কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে নেওয়া যায় তা হলেও লক্ষ্য পূরণ হতে পারে।
কী ভাবে হাঁটার পরিমাণ বাড়বে?
ফোনে কথা বলার সময় হাঁটুন। লিফ্টে না উঠে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করুন। কাজের মাঝেই অফিসের চারপাশটা হেঁটে নিতে পারেন বার কয়েক বা যে বাসস্টপ থেকে রোজ বাস ধরেন, তা না ধরে পরের স্টপেজ পর্যন্ত হেঁটে নিলেন। নিজের চা বা কফিটা অন্য কাউকে আনতে না বলে নিজে হেঁটে গিয়ে নিয়ে এলেও হাঁটা হবে। মোট কথা বসে না থেকে সচল থাকা। তাতেই অনেক উপকার পাওয়া যায়।
গতির কোনও ভূমিকা নেই?
চিকিৎসা সংক্রান্ত পত্রিকা জামা-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে বলা হচ্ছে, হাঁটার গতি শারীরিক সুফলে কোনও বাড়তি প্রভাব ফেলেছে বলে দেখা যাচ্ছে না। গবেষকেরা বলছেন, দ্রুত গতিতে হাঁটলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি কমেছে বলে দেখা যায়নি কোথাও। যিনি স্বাভাবিক গতিতে হাঁটাচলা করেছেন আর যিনি দ্রুত গতিতে হেঁটেছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের তফাত দেখা যায়নি। তাই গবেষকেরা বলেছেন, হাঁটার গতি বৃদ্ধির থেকে বরং কতটা হাঁটছেন, সে দিকেই নজর দেওয়া উচিত।