শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে গেলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া বাধ্যতামূলক। কোনও প্রার্থীই সেই ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াই করছেন পার্লামেন্টের বিরোধী দলনেতা সজিথ প্রেমদাসা, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের পুত্র নমল রাজাপক্ষে এবং বামজোট নেতা অনুরাকুমার দিশানায়েকসহ মোট ৩৮ জন প্রার্থী। শনিবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে, যা সন্ধ্যায় শেষ হওয়ার পরপরই ভোট গণনা শুরু হবে।
শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে এটি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে শ্রীলঙ্কা প্রথমবারের মতো এমন ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হয়, যেখানে দেশটি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল। সেই সঙ্কটের মধ্যেই ২০২২ সালে পতন ঘটে রাজাপক্ষে পরিবারের। জনবিক্ষোভের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তাঁর ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া, যারা দেশ ছেড়ে চলে যান। পরে পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে।
রাজাপক্ষে পরিবার আবারও শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে, ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে তারা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠছে। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজাপক্ষে পরিবারের সদস্য নমল রাজাপক্ষে, যিনি শ্রীলঙ্কান পডুজন পেরামুনা (এসএলপিপি) দলের প্রার্থী। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা তাঁর কাকা বাসিল রাজাপক্ষে।
বিরোধী দলনেতা সাজিথ প্রেমদাসা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সমগী জন বলওয়েগা (এসজেবি) দলের হয়ে। সাজিথের বাবা, রণসিঙ্ঘে প্রেমদাসা, ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং তিনি তামিল জঙ্গিগোষ্ঠী এলটিটিইর হামলায় নিহত হয়েছিলেন।
ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুরা দিশানায়েকের পাশাপাশি, ২০২২ সালে রাজাপক্ষে বিরোধী গণবিক্ষোভের অন্যতম নেতা নুয়ান বোপেজ পিপলস স্ট্রাগল অ্যালায়েন্স দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লড়াইয়ে রয়েছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ও প্রাক্তন মন্ত্রী শরথ ফনসেকা এবং বৌদ্ধদের রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর প্রধান, প্রাক্তন মন্ত্রী বিজয়দশা রাজাপক্ষে।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। যদি কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পান, তবে সর্বাধিক ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) নির্বাচন হবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কুশলী রাজনীতিক হিসেবে রনিল বিক্রমসিঙ্ঘের জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।