সামরিক আইনের ঘোষণা, আচমকাই দেশে সামরিক আইন (মার্শাল ’ল) জারি করার কথা ঘোষণা করে বিপদে পড়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। তবে প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে পিছু হটতে হয় তাঁকে। জারি করার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন ইওল। তবে তার পরও মেলেনি স্বস্তি। বিরোধী শিবির তাঁর বরখাস্তের (ইমপিচমেন্ট) দাবি তোলে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্টের বরখাস্তের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হলেন বিরোধীরা।
শনিবার পার্লামেন্টে ছিল বিরোধীরা প্রেসিডেন্টের বরখাস্ত চেয়ে প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু ইওলের দল পিপল্স পাওয়ার পার্টির সদস্যেরা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে পার্লামেন্টের মধ্যে হই হট্টগোল শুরু করেন। তার পরই পার্লামেন্ট বয়কট করে বেরিয়ে যান তাঁরা। ফলে ভোটাভুটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যা তুলতে ব্যর্থ হন বিরোধীরা। তাঁদের প্রস্তাব খারিজ করে দেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার উও ওন-শিক।
গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইওল জানান, তিনি সারা দেশে সামরিক আইন বলবৎ করার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাঁকে, তার ব্যাখ্যাও করেছিলেন ইওল। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। তাঁর ব্যাখ্যা, দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করছেন। এই আইন বাস্তবায়িত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু-কে। সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন ইওল।
প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরই দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিরোধীরা তো বটেই, শাসকদলের অনেকেই সামরিক আইনের বিরুদ্ধে পথে নামেন। সে দেশের পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যেরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে অশান্ত হয়ে ওঠে অ্যাসেম্বলি ভবন চত্বর। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ। এ হেন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলেই সামরিক আইন জারির বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বিরোধী সদস্যেরা। সেখানে শুধু বিরোধীরা নয়, শাসকদলের অনেক সদস্যই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সামরিক আইন প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেন ৩০০ সদস্যের মধ্যে ১৯০ জন। সেই তালিকায় ছিলেন পিপল্স পাওয়ার পার্টির অনেকেই। বিক্ষোভের মুখে রাতেই সামরিক আইন প্রত্যাহারের কথা জানান ইওল।
তার পরই ইওলকে ইমপিচ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি, প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির পাশাপাশি ইওলের দল পিপল্স পাওয়ার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্যদের একাংশও ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছেন। ইওল-বিরোধী জোটের নেতা হোয়াং উন হা বলেন, ‘‘আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা ভোটাভুটি করতে চাই।’’ শনিবার সেই ভোটাভুটি হয়। কিন্তু পিপল্স পাওয়ার পার্টির কেউই অংশ নিলেন না ভোটাভুটিতে।