হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য, হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। তারা বলছে, তিন সপ্তাহ আগে বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলছে, হাশেম সাফিএদ্দিন লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহরতলীতে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
তবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইরত লেবাননের শিয়া মুসলিমদের শক্তিশালী সংগঠন হেজবুল্লাহ এখনও খবরটি নিশ্চিত করেনি।
সংগঠনটির আগের নেতা হাসান নাসরাল্লাহ গত সাতাশে সেপ্টেম্বর বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
পরে গত ৪ঠা অক্টোবর বিমানবন্দরের কাছে বিমান হামলার পর হেজবুল্লাহ কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে তারা সাফিএদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলেছিল যে সাফিএদ্দিন ছিলেন সেদিনের বোমা হামলার টার্গেট।
সেই রাতে ব্যাপক বিস্ফোরণে বৈরুত নগরী কেঁপে ওঠে। সকাল পর্যন্ত ধোঁয়ার কুন্ডুলি দেখা যায় সেখানে।
মঙ্গলবার আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানায় যে সাফিএদ্দিনের সঙ্গে একই ঘটনায় নিহত হন আলী হুসেইন হাজিমা, যাকে হেজবুল্লাহর গোয়েন্দা সদর দপ্তরের কমান্ডার হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসরায়েল।
তারা সাফিএদ্দিনকে ‘হেজবুল্লাহর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি’ বছরের পর বছর ধরে ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা’ পরিচালনার জন্য দায়ী করেছে।
হেজবুল্লাহ একটি সামরিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, লেবাননের ওপর যাদের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ আছে। অন্যদিকে; ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ২০১৭ সালে সাফিএদ্দিনকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করে। মৃত্যুর সময় তার বয়স ৬০ বছর হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
তিনি ছিলেন হাসান নাসরাল্লাহর নিকটাত্মীয় (কাজিন) এবং ধর্মীয় বিষয় নিয়ে ইরানে শিক্ষালাভ করেছেন। তার ছেলে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলাইমানির মেয়েকে বিয়ে করেছেন। কাশেম সোলাইমানি ছিলেন ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী সামরিক কমান্ডার। ইরানে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন।
বৈরুতে এই গ্রীষ্মে দেয়া এক ভাষণে সাফিএদ্দিন কীভাবে হেজবুল্লাহর নেতৃত্বে আসছেন সেটি বর্ণনা করেছিলেন।
“আমাদের প্রতিরোধ সংগ্রামে যখন একজন নেতা শহীদ হন, তখন আরেকজন পতাকা তুলে নেন এবং নতুন করে দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যান,” তাকে এভাবে উদ্ধৃত করেছিল বার্তা সংস্থা এএফপি।
গাজা যুদ্ধের জের ধরে প্রায় এক বছর ধরে আন্ত:সীমান্ত লড়াইয়ের পর ইসরায়েল হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে।
তারা বলছে, রকেট হামলার কারণে ইসরায়েলের সীমান্ত এলাকায় লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে তারা নিরাপদে ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চায়।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার ৪৬৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ১২ হাজার মানুষ।
হেজবুল্লাহও এই সময়ে হাজার হাজার রকেট ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ উত্তর ইসরায়েল ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় ৫৯ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
সুত্র: বিবিসি