মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়ন, পরিষদের চেয়ারম্যান আফছার উদ্দিন সরকার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আশীর্বাদে তামাক কোম্পানির একটি অল্প বেতনের কর্মচারী থেকে এখন অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এলাকায় মন্ত্রীর বিভিন্ন অপকর্মের প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন তিনি।
জাহিদ মালেকের ‘ছায়ামন্ত্রী’ হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আফছার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য একহাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিভিন্ন বালুমহাল, কমিশন বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, হাট-বাজার ইজারা নিয়ন্ত্রণ, থানায় মামলা দমন এবং সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণের মতো কাজগুলো মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে করতেন।
আফছার এক সময় একটি তামাক কোম্পানির মাঠপর্যায়ের কর্মচারী ছিলেন এবং সাবেক মন্ত্রীর মালিকানাধীন সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেও কাজ করেছেন। বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত মানিকগঞ্জ-৩ আসনে জাহিদ মালেক যখন দ্বিতীয়বার এমপি হন, তখন আফছারের ভাগ্য বদলে যায়।
এরপর আফছার আর বাইসাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়ে তামাক বিক্রয়ের কাজে ফিরতে হয়নি। মন্ত্রীর সহযোগিতায় এক লাফে গড়পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে পৌঁছান। তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে তিনি অনায়াসেই চেয়ারম্যানের পদটি দখল করেন। পাশাপাশি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও হন।
মানিকগঞ্জের অঘোষিত ‘ছায়ামন্ত্রী’ আফছার নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেন। সাধারণ মানুষের জমি দখল বা নামমাত্র মূল্যে কিনে নিতেন। তার বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাঈশী সুমন।
স্থানীয় দরিদ্র সাহাম উদ্দিনের (৮৪) স্ত্রী আছিয়া খাতুনের ৭ শতাংশ জমির ওপর আফছারের নজর পড়ে। ওই জমির বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা হলেও, আফছার ষড়যন্ত্র করে ওই জমির সোয়া ৪ শতাংশ নামমাত্র মূল্যে কিনে নেন এবং সেখানে বিলাসবহুল পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাহাম উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা আফছারের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবার পরিকল্পনা করছেন। আফছারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইউনিয়নের উন্নয়ন তহবিলের টাকা নিজ বাড়ির জন্য ব্যয় করেছেন, যদিও ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী।
আফছারের ছেলে পারভেজ মাহমুদ সরকার ঝিনুকও বাবার ক্ষমতায় সুবিধা পেয়েছে এবং স্থানীয় ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে। তার মেয়ের জামাই মহব্বত আলী খানও সরকারি চাকরি পেয়েছেন আফছারের মাধ্যমে, যদিও তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন।
আফছার স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তারসহ বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেকের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হলেও, আফছারের প্রতি তার আনুগত্য ছিল সর্বাধিক।
আফছারের সম্পদের মধ্যে রয়েছে গ্রামের বাড়িতে ডুপ্লেক্স, শহরের একটি ফ্ল্যাট ও বিভিন্ন স্থানে কোটি টাকার জমি। নুরে আলম নামে একজন স্থানীয় জানান, আফছার অবৈধভাবে আরও জমি দখল করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে আফছার উদ্দিন সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় এবং বাড়ির প্রধান ফটকে তালা লাগানো ছিল। স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি ও তার পরিবার গা ঢাকা দিয়েছেন।