আমি এক বয়সী কন্যাশিশু,৮০তম জন্মদিন ছুঁয়ে সাহিত্য সমালোচক, তাত্ত্বিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক (জন্ম: ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২) বলেছেন, “আমি এক বয়সী কন্যাশিশু” (“I’m a happy old girl”)। কর্মে, সৃজনে, বক্তব্যে এবং চিন্তায় তিনি সত্যিই তাই—এক চঞ্চল শিশুর মতো সদা সক্রিয়।
বাংলা ভাষা থেকে বৈশ্বিক বিদ্যামণ্ডলে স্থান করে নেওয়ার ক্ষেত্রে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক অন্যতম অগ্রগণ্য। পূর্ববঙ্গের বৃহত্তর ময়মনসিংহ তার পিতৃভূমি হলেও জন্ম ও প্রাথমিক বিকাশ ঘটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়।
১৯৪২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ব্রিটিশশাসিত ভারতের অখণ্ড বঙ্গদেশের রাজধানী কলকাতায় চিকিৎসক ডা. পরেশ চন্দ্র ও শিবানী চক্রবর্তীর কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন গায়ত্রী চক্রবর্তী। ১৯৫৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেন, সেখানে ইংরেজিতে এমএ এবং তুলনামূলক সাহিত্যে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৬০ সালে জনৈক ট্যালবট স্পিভাকের সঙ্গে সীমিত সময়ের জন্য বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
গায়ত্রী স্পিভাকের উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর উপনিবেশবাদের সূচনাকারী রচনা “Can the Subaltern Speak?” এবং জাক দেরিদার “De la grammatologie” বইটির ইংরেজি অনুবাদ, যা তিনি মূল ফরাসি থেকে করেন। এর ইংরেজি নাম “On Grammatology” এবং এর বাংলা নামকরণ করেছেন “লিপিতত্ত্বপ্রসঙ্গ”।
গায়ত্রী স্পিভাক নিজেকে বাস্তববাদী মার্ক্সীয়–নারীবাদী অবিনির্মাণিক হিসেবে পরিচয় দেন। উত্তরাধুনিক ও উত্তর উপনিবেশবাদের তাত্ত্বিক ধারণা নির্মাণে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, এবং ইতিহাসকে সাবঅল্টার্ন বা নিম্নবর্গের প্রেক্ষাপটে আলোচনার ক্ষেত্রেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো, অশীতিপর বয়সেও তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে এতোটাই কার্যকর যে, তা বিস্ময়কর। এখনও তিনি গবেষণায় এবং শ্রেণিকক্ষে সক্রিয় রয়েছেন, আলোচনা ও বক্তৃতায় সাবলীল এবং উৎসাহী। দেশে-বিদেশে বিদ্যাচর্চায় তার বিরামহীন ও অদম্য অবদান রয়েছে। জুন মাসের শেষে তিনি কলকাতার দক্ষিণে ডায়মন্ড হারবার কলেজে ‘বেগম রোকেয়া স্মারক বক্তৃতা’ দিতে আসছেন।