জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ, ঢাকা শহর ও জেলার আওতাধীন নদী-খালগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করে “ব্লু-নেটওয়ার্ক” গঠনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউকের মাস্টারপ্ল্যানে প্রস্তাবিত ব্লু-নেটওয়ার্ককে ভিত্তি করে নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় ধাপে ধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
শনিবার পুরান ঢাকার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কর্মশালাটি ঢাকার নদী-খালগুলো অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার এবং সেগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এবং বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ঢাকা জেলার আওতায় ২১৩টি খাল ও ২০টি নদী ছড়িয়ে আছে, যা বর্তমানে দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এসব নদী-খাল পুনরুদ্ধার করা হবে। প্রথমে দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে, তারপর টেকসই সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। জলকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব নদী-খালকে টেকসই রাখা হবে, এবং এ জন্য ব্লু-নেটওয়ার্ক গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত জানান, ঢাকায় বর্তমানে ২০টি নদী রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও বালু। তিনি নদীগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকৌশলী মাশরেকুল আরেফিন জানান, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব নদীর তীরে ইতোমধ্যে হাজার হাজার পিলার স্থাপন করা হয়েছে, তবে কিছু জায়গায় নানা বাধার কারণে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজ চৌধুরী জানান, ঢাকার খালগুলোতে দখলদারত্ব চলছে। ইতোমধ্যে ৫০টি খালের বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে এবং বাকিগুলোর কাজ চলছে।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈন বলেন, প্রকৃতিকে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দিতে হবে। নদী ও খালের সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করলে সমাধান করা সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও জনস্বার্থ ও পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করা হবে।