নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছাকাছি হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাতের আরও এক জটিল অধ্যায়।
হামলার পটভূমি
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে ড্রোন হামলা ঘটায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ১৮ অক্টোবর, স্থানীয় সময় দুপুরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছাকাছি এলাকা দিয়ে হিজবুল্লাহর একটি ড্রোন প্রবেশ করে এবং তা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা ধ্বংস করা হয়। যদিও এতে নেতানিয়াহুর নিরাপত্তার কোনো ক্ষতি হয়নি, তবে এই আক্রমণ ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলেছে।
হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়া
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি একটি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। তারা ইসরায়েলের অব্যাহত আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় এই ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। সংগঠনটি আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েল যদি লেবাননের আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং দক্ষিণ লেবাননের ওপর হামলা চালিয়ে যায়, তাহলে আরও বড় ধরনের আক্রমণ হবে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর এই হামলাকে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করছে এবং হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামলার পর তার বাসভবন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং বর্তমানে তিনি একটি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি এই হামলার পর এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েল নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে কোনো দ্বিধা করবে না। যারা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তারা কঠোর প্রতিশোধের মুখোমুখি হবে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং হিজবুল্লাহর এমন কর্মকাণ্ডকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূতও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সংঘাতের ভবিষ্যৎ
এই ড্রোন হামলার পর ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ইসরায়েল সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে লেবাননের সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে। হিজবুল্লাহরও দক্ষিণ লেবাননে তাদের অবস্থান জোরদার করছে।
পরিস্থিতির মূল্যায়ন
বিশ্লেষকদের মতে, এই ড্রোন হামলা দুই দেশের মধ্যে নতুন একটি সংঘর্ষের ইঙ্গিত হতে পারে। ইসরায়েলের সামরিক শক্তি অনেক বেশি হলেও হিজবুল্লাহর আক্রমণের ধরণ ও তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা ইসরায়েলের জন্য চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিজবুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে গেরিলা যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী এবং তারা লেবাননের জনগণের একাংশের সমর্থনও পায়, যা তাদের শক্তি আরও বৃদ্ধি করেছে।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক মহলেও এই হামলা নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, ইসরায়েলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই হামলা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা আগের চেয়ে কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ধরনের নিরাপত্তা সংকট তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে।