বিপিএলে আলো ছড়াতে, বিপিএল মানেই যেন একটা না একটা বিতর্ক। বিসিবির ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক একমাত্র টি-টোয়েন্টি লিগের প্রায় প্রতি আসরেই মাঠের খেলায় ছায়া ফেলেছে মাঠের বাইরের আলোচনা–সমালোচনা। এবার সে ধারা থেকে বেরিয়ে এসে সাত দলের টুর্নামেন্টটিকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বিসিবি।
এ ক্ষেত্রে তারা পাশে পাচ্ছে সরকারকেও। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অলিম্পিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিপিএলকে দেশে ও দেশের বাইরে জনপ্রিয় করে তুলতে চায় বিসিবি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সূচি অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা বিপিএলের ১১তম আসর।
টুর্নামেন্ট সামনে রেখে কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ক্রিকেট বোর্ড কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সম্প্রচার স্বত্বাধিকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিসিবি। নতুন বিপিএলকে কীভাবে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত করা যায়, সে আলোচনাই হয়েছে সভায়।
আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যদি মাঠে আসেন, একটা বক্তব্য দেন, বিদেশ থেকে দারুণ নামকরা একজন ফুটবলার বা হলিউড থেকে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী এখানে এসে সংযুক্ত হন, এটা নিশ্চয়ই সারা পৃথিবীর মিডিয়াতে আসবে। আমাদেরও সে চেষ্টা থাকবে- নাজমূল আবেদীন, বিসিবি পরিচালক
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সর্বশেষ প্যারিস অলিম্পিকের পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালক নাজমূল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর সে অভিজ্ঞতা আলো ফেলবে এবারের বিপিএলে, ‘এ ধরনের ইভেন্টের সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মানুষকে কীভাবে আরও সম্পৃক্ত করতে হয়, মানুষকে উজ্জীবিত করে অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা যায়, এ বিষয়গুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না।’
বিপিএলকে দেশের বাইরে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রেও এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে আশা নাজমূল আবেদীনের, ‘কীভাবে এটাকে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে পরিণত করা যায়, কীভাবে এটাকে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা যায়, কীভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়…বিশ্ব যেন দেখে বাংলাদেশের তরুণেরা কেমন, বাংলাদেশের সমাজটা কেমন, বাংলাদেশের খাওয়া কেমন…এ জিনিসটা যেন সবাই দেখে। শুধু বিপিএল নয়, বাংলাদেশও একটা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাবে এই বিপিএলের পর।’
এবার বিপিএলে খেলার বাইরের অনেক বৈশ্বিক তারকাকে দেখা যাবে বলে আভাস দিয়েছেন নাজমূল আবেদীন। তারকা ক্রিকেটার, ফুটবলার, এমনকি দেখা যেতে পারে হলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও, ‘আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যদি মাঠে আসেন, একটা বক্তব্য দেন, বিদেশ থেকে দারুণ নামকরা একজন ফুটবলার বা হলিউড থেকে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী এখানে এসে সংযুক্ত হন, এটা নিশ্চয়ই সারা পৃথিবীর মিডিয়াতে আসবে। আমাদেরও সে চেষ্টা থাকবে।’
সামাজিক বিভিন্ন ব্যাপারে বিপিএলকে কাজে লাগানো হবে। আমরা শুধু খেলার মাঠেই বিপিএলকে দেখব না। সারা দেশে কোনো না কোনোভাবে বিপিএল ছড়িয়ে পড়বে। সম্প্রতি যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং সেটার যে চেতনা, সেটাও আমরা দেখতে পাব বিপিএলের বিভিন্ন পর্যায়ে।-নাজমুল আবেদীন, বিসিবি পরিচালক
ক্রিকেট মাঠের বাইরেও বিপিএলকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এবার। সে জন্য এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বিপিএলের সময় এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে দেশব্যাপী ইয়ুথ ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য ক্রীড়া ফেডারেশনও এ সময় বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজন করতে পারবে। জুলাই–আগস্টের গণজাগরণের পর তারুণ্যের যে উচ্ছ্বাস, সেটা যেন সব খেলায়ও ছড়িয়ে যায়, সে জন্যই ইয়ুথ ফেস্টিভ্যালের পরিকল্পনা। এ নিয়ে নাজমূল আবেদীন বলেছেন, ‘সামাজিক বিভিন্ন ব্যাপারে বিপিএলকে কাজে লাগানো হবে। আমরা শুধু খেলার মাঠেই বিপিএলকে দেখব না। সারা দেশে কোনো না কোনোভাবে বিপিএল ছড়িয়ে পড়বে। সম্প্রতি যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং সেটার যে চেতনা, সেটাও আমরা দেখতে পাব বিপিএলের বিভিন্ন পর্যায়ে।’
বিপিএলের ১১তম আসরে নতুন করে থিম সংও তৈরি হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এবার বিপিএলে থাকবে মাসকটও। ট্রফি ট্যুর আর মাসকট ট্যুরেরও পরিকল্পনা আছে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে কনসার্ট। তাতে পাকিস্তানের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের আসার সম্ভাবনা আছে। শুধু মিরপুরে নয়, বিপিএল কনসার্ট হবে অন্য দুই ভেন্যু চট্টগ্রাম আর সিলেটেও।