মঙ্গল যাত্রায় যুগান্তকারী উদ্ভাবন, মঙ্গল অভিযানে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যালোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে ব্যাকটেরিয়া। লেজার প্রযুক্তির সহায়তায় ওই পদ্ধতি ব্যবহার করে সূর্যের আলোর শক্তি নিয়ে চালানো যেতে পারে নভোযান। আর এ পদ্ধতি ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ প্রযুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গাছ এবং ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে আলোকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর থেকে।
এর লক্ষ্য হলো, বিশেষ ধরনের ফটোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া থেকে সূর্যালোক সংগ্রহ করে এমন অ্যান্টেনার ব্যবহার করে এ শক্তির ক্ষমতা বাড়ানো যায়। আর পরে ওই শক্তিকে লেজারে রূপান্তর করে মহাকাশে প্রেরণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এতে ‘কৃত্রিম পচনশীল’ উপাদান ব্যবহার না করে বরং প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে লেজার রশ্মিগুলো কার্যকর উপায়ে মহাকাশে নতুন করে তৈরি হবে। এর মানে, পৃথিবী থেকে নতুন কোনো যন্ত্রাংশ পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই এগুলো সক্রিয় থাকতে পারে।
গতানুগতিক সৌর প্যানেল সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তর করে। এর বিপরীতে, নতুন প্রক্রিয়াটি বৈদ্যুতিক উপাদানের ওপর নির্ভর করে না
প্রকল্পটিকে ডাকা হচ্ছে ‘এপেস’ নামে, যেখানে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষাগারের পরিবেশে এ প্রযুক্তির উন্নয়ন করে তা নানা পরীক্ষা ও মানোন্নয়ন করে গবেষকরা দেখার চেষ্টা করেছেন, এটি মহাকাশে ব্যবহারযোগ্য কি না।
গবেষকদের মতে, এ প্রকল্পটি সফল হলে তা গোটা বিশ্বের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারবে, যার মধ্যে রয়েছে চাঁদে পৃষ্ঠে ঘাঁটি নির্মাণ ও মঙ্গল গ্রহে মিশন পরিচালনার সম্ভাবনাও। এর পাশাপাশি, পৃথিবীতে পরিবেশবান্ধব ও তারবিহীন শক্তি যোগান দেওয়ার নতুন এক উপায় হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও দেখাচ্ছে এটি।
স্কটল্যান্ডের হেরিওট-ওয়াট ইউনিভার্সিটি’র ‘ইনস্টিটিউট অফ ফটোনিকস অ্যান্ড কোয়ান্টাম সায়েন্সেস’ বিভাগের অধাপক এরিক গজার বলেছেন, এ প্রযুক্তি ‘মহাকাশ খাতের জন্য যুগান্তকারী এক উদ্ভাবন’। পৃথিবী থেকে পাঠানো বিভিন্ন পচনশীল কৃত্রিম উপাদানের ওপর নির্ভর না করে বরং মহাকাশে টেকসই শক্তি উৎপাদন করা বড় এক চ্যালেঞ্জ
তিনি বলছেন, আমাদের প্রকল্প স্রেফ জীববিদ্যা থেকে অনুপ্রেরণা নেয়নি। বরং এর চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ব্যাকটেরিয়ার সালোকসংশ্লেষণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা থেকে সহায়তা নিয়েছে যাতে মহাকাশেও এই সক্ষমতা অর্জন করা যায়। এপেস প্রকল্পের লক্ষ্য, নতুন এক ধরনের লেজার চালিত সূর্যালোক তৈরি করা।
গবেষকরা এইসব কাঠামোর কৃত্রিম সংস্করণ ও নতুন লেজার উপাদান তৈরির চেষ্টা করছেন, যা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয়ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।
পরবর্তীতে, সেইসব উপাদানকে নতুন এক ধরনের লেজারে সমন্বিত করার পরিকল্পনা করছেন গবেষকরা, যা পরবর্তীতে এর চেয়েও বড় বিভিন্ন সিস্টেমে পরীক্ষা করা হবে বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।
নতুন এ প্রযুক্তির প্রথম প্রোটোটাইপটি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে তিন বছরের মধ্যে।