বেশ কিছুদিন ঘরের এককোণে সংরক্ষণ করে রেখে দিলে আলুর মধ্যে অঙ্কুর গঁজাতে দেখা যায়, যা আলুর চোখ হিসেবেও পরিচিত। জেনে নিই এই অঙ্কুরিত আলু রান্নায় ব্যবহার করা আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকারক।
ছবি সেলিনা শিল্পীর।
আলু নিয়ে বিস্তারিত বলার কিছু নেই। দাম বাড়ুক বা কমুক, মানুষের আলুর প্রতি আগ্রহ কমবে না। প্রতিদিনের রান্নাবান্নায় আলু বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আলু প্রধান খাদ্য। আলু যখন ইউরোপে প্রথম আসে, তখন এটা গরিবের খাবার হিসেবে পরিচিতি পায়। যে কৃষকদের জমি কেনা থেকে শুরু করে বলদ ও লাঙ্গল কেনার সামর্থ্য ছিল না, তাঁদের জন্য আলু চাষই ছিল সহজ ও সুলভ উপায় । কারণ, এই চাষের জন্য দরকার একটি কোদাল আর ছোট জায়গা। এ ছাড়া আলু উৎপাদনের হারও অনেক বেশি। আমাদের দেশেও অনেক গরিব মানুষের প্রধান খাদ্যতালিকায় রয়েছে এই আলু। আলু স্টার্চসমৃদ্ধ সবজি হিসেবে পরিচিত। ভিটামিন সি আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টও রয়েছে এতে।
এবার আসা যাক আলুর অন্য গল্পে। বেশ কিছুদিন ঘরের এককোণে সংরক্ষণ করে রেখে দিলে আলুর মধ্যে অঙ্কুর গঁজাতে দেখা যায়, যা আলুর চোখ হিসেবেও পরিচিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অঙ্কুরিত আলু রান্নায় ব্যবহার করলে আমাদের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর। শুরুতেই জেনে নিই আলুতে এই অঙ্কুর গজানোর কারণ কী। আলু যখনই গরম, আর্দ্র পরিবেশ ও আলোর মধ্যে থাকে, তখনই এই অঙ্কুর হওয়া শুরু হয়। এটা আলুর সাধারণ ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। তবে অঙ্কুরিত আলুতে কিছু পরিবর্তন ঘটে।
পুষ্টিগুণের পরিবর্তন
অঙ্কুর বের হওয়া ক্ষতিকর কিছু নয়। তবে এতে পুষ্টিগুণের ঘাটতি দেখা দেয়। যেমন ভিটামিন সি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমে যাওয়া। এ ছাড়া আলুর আরও কিছু পুষ্টিগুণ কমে, যা কিনা অঙ্কুরের বিকাশের ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এই অঙ্কুর যদিওবা ভিটামিন বি৬ ও ফাইবারযুক্ত। এ ছাড়া অঙ্কুরিত আলু কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থও তৈরি করে। যেমন সোলানিনের পরিমাণ বাড়ায়। সোলানিন প্রাকৃতিক টক্সিন হিসেবে পরিচিত, যা অতিরিক্ত গ্রহণে বমি হতে শুরু করে এবং এটি অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য দায়ী। তাই রান্নার ক্ষেত্রে এই অঙ্কুর কেটে বাদ দিয়ে রান্না করাই শ্রেয়।
গ্লাইকো–অ্যালকালয়েডের মাত্রা বৃদ্ধি
আলুতে গ্লাইকো–অ্যালকালয়েড থাকে। এটা একধরনের টক্সিন, যা আলুকে কীটপতঙ্গের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে। আলুর প্রাকৃতিক ডিফেন্স মেকানিজম হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অঙ্কুরিত আলুতে গ্লাইকো-অ্যালকালয়েড প্রাকৃতিকভাবেই বেশি উৎপন্ন হয়। তাই অতিরিক্ত গ্রহণ করলে পেটব্যথা, বমি ভাব, এমনকি ডায়রিয়াও হতে পারে। এ ছাড়া ঝিম ভাব, মাথাব্যথাও বাড়তে পারে।
অঙ্কুরিত আলু কি একদমই খাওয়া যাবে না
এটা নির্ভর করছে অঙ্কুরের আকার ও আলুর সবুজ বর্ণের পরিবর্তনের ওপর। বিবর্ণ হলে তা না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া আলুতে অল্প কুঁড়ি হলে তা ছুড়ি দিয়ে কেটে খাওয়া যাবে। এতে ক্ষতি তেমন নেই।
আলুতে অঙ্কুর গজানো প্রতিরোধ করার উপায়
আলু সব সময় শীতল, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও শুকনা জায়গায় রাখতে হবে। রেফ্রিজারেটরে আলু রাখা যাবে না। কারণ, বেশি ঠান্ডা আলুর স্টার্চকে সুগারে রূপান্তর করে। ফলে আলুর স্বাদ পরিবর্তিত হয়। পেঁয়াজের সঙ্গে আলু একসঙ্গে কখনোই রাখবেন না। কারণ, পেঁয়াজ থেকে যে গ্যাস বের হয়, তা আলুর কুঁড়ি জন্মাতে সাহায্য করে।
আলু সংরক্ষণের টিপস
১. আলুর খোসা ছাড়িয়ে নিলেই এই অঙ্কুর নিয়ে আতঙ্কের কিছু থাকে না। তাই রান্নার আগে আলু ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২. আলুতে জন্মানো অঙ্কুর ছুরি দিয়ে কেটে বাদ দেওয়া যেতে পারে। এতে বেশি ঘনত্বের গ্লাইকো-অ্যালকালয়েডে পূর্ণ অঙ্কুর ফেলে দিলেই হবে।
৩. আলু পরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে। নরম হয়ে যাওয়া বা গন্ধযুক্ত আলু ব্যবহার না করে ফেলে দেওয়া ভালো।
৪. আলু পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে একটু সময় নিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করলে এই গ্লাইকো–অ্যালকালয়েড তথা টক্সিনের কার্যকারিতা কমে যায়।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কি এই আলু ভালো?
অঙ্কুরিত আলু খাওয়া ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য একদমই ঠিক নয়। অঙ্কুরোদ্গমের সময় আলুর স্টার্চ পরিবর্তিত হয়ে সুগার হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়। এটি একজন ডায়াবেটিক রোগীর জন্য অত্যন্ত খারাপ। এ ছাড়া হজমে ঝামেলা করতেও এর তুলনা নেই।
খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আমাদের বাঁচাতে পারে নানা শারীরিক সমস্যার হাত থেকে। শুধু খাওয়াটাই মুখ্য না হয়ে বরং কী খাচ্ছি , খাবারটা কতটুকু উপকারী—এসব জেনে খাদ্যতালিকা তৈরি করা উচিত। এতে শরীর সুস্থ থাকবে, রোগজীবাণুও বাসা কম বাঁধবে।
তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া