দেশের সেরা ৭ জলপ্রপাত, বাংলাদেশ মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক স্বপ্নময় স্থান। প্রতিবছর দেশি-বিদেশি অসংখ্য পর্যটক এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। বৃষ্টির মৌসুমে অল্প খরচে দেশের বিভিন্ন জলপ্রপাত ঘুরে আসার অসাধারণ সুযোগ রয়েছে।
জলপ্রপাত প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য। পাহাড়ের উঁচু চূড়া থেকে সাদা জলের ধারা যখন ঝরে পড়ে, তা বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগায়। জলপ্রপাতের সামনে দাঁড়ালে শিহরণ জাগানো সেই মুহূর্তে শরীর ও মনের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই মুছে যায়।
জলপ্রপাতের স্রোতধারা, পাহাড়, আর চারপাশের সবুজ অরণ্য যেন প্রকৃতির এক নিখুঁত ছবি আঁকে। এই বর্ষায় সুযোগ পেলেই ঘুরে আসতে পারেন দেশের কিছু মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত বা ঝরনা, যা আপনার ভ্রমণকে করবে আরও বিশেষ!
চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় কয়েকটি জলপ্রপাত বা ঝরনার কথা, যেখানে আপনি অল্প খরচে বৃষ্টির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন
আমিয়াখুম জলপ্রপাত
বাংলাদেশে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকরা সবসময়ই ঝরনা বা জলপ্রপাতের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ করে বর্ষায় জলপ্রপাতগুলোর সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। যদিও বর্ষায় পাহাড়ি পথ দুর্গম হয়ে ওঠে, তবু প্রকৃতির টানে অনেকে এই ঝুঁকিও নেন। আসুন, জেনে নিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় জলপ্রপাতগুলো এবং সেগুলোর যাতায়াত পদ্ধতি সম্পর্কে।
আমিয়াখুম
আমিয়াখুমের অপূর্ব সৌন্দর্য বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণ করে, তবে বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যদিও বর্ষার সময় পাহাড়ি দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া বেশ কঠিন। বান্দরবান হয়ে থানচি উপজেলা থেকে দুটি পথে আমিয়াখুমে পৌঁছানো যায়:
- থানচি-পদ্মঝিরি-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম।
- থানচি-রেমাক্রি-নাফাখুম-জিনাপাড়া-থুইসাপাড়া-দেবতাপাহাড়-আমিয়াখুম।
প্রথম পথে পদ্মঝিরি দিয়ে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হয়। দ্বিতীয় রুট তুলনামূলক সহজ।
নাফাখুম জলপ্রপাত
বান্দরবানের থানচি উপজেলায় অবস্থিত নাফাখুম জলপ্রপাত একটি আশ্চর্য সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের স্থান। বান্দরবান থেকে থানচি হয়ে নৌকায় রেমাক্রি পর্যন্ত যাত্রা করে সেখানে পৌঁছানো যায়। রেমাক্রি বাজার থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা হেঁটে নাফাখুমে পৌঁছাতে পারবেন।
তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত
তিনাপ সাইতার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। বর্ষার সময় এর পানি প্রবাহ অনেক বেড়ে যায় এবং স্বচ্ছ পানির ধারা মোহিত করে। বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি হয়ে ট্রেকিং করে সেখানে যাওয়া যায়।
হামহাম জলপ্রপাত (দেশের সেরা ৭ জলপ্রপাত)
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের গভীর অরণ্যে অবস্থিত হামহাম জলপ্রপাতটি বর্ষায় বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে যেতে হলে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ থেকে গাইড নিয়ে ট্রেকিং করতে হয়।
জাদিপাই জলপ্রপাত
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত জাদিপাই ঝরনা একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জলপ্রপাত। কেওক্রাডং এবং জাদিপাই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং করে সেখানে পৌঁছাতে হয়। বর্ষায় ঝরনাটি তার সর্বোচ্চ সৌন্দর্যে পৌঁছে যায়।
ধুপপানি জলপ্রপাত
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ওড়াছড়ি এলাকায় অবস্থিত ধুপপানি ঝরনা একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান। কাপ্তাই থেকে ট্রলার নিয়ে বিলাইছড়ি হয়ে এখানে পৌঁছানো যায়। পাহাড়ি ঢলের নদী পাড়ি দিয়ে ওড়াছড়ি পৌঁছাতে হয়।
নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাত
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত নাপিত্তাছড়া ঝরনা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। একদিনেই এখানে তিনটি ঝরনা (কুপিটা খুম, মিঠাছড়ি, বান্দরখুম) দেখা যায়। মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারী বাজার থেকে গাইড নিয়ে এই ঝরনাগুলো ঘুরে দেখা সম্ভব।
বর্ষাকালে এসব ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগের জন্যই সেরা সময়।