আমি ইয়াসমিন বলছি সিনেমা, দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইয়াসমিনের জীবন নিয়ে নির্মিতব্য সিনেমা “আমি ইয়াসমিন বলছি” নিয়ে একটি খবর গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘অনন্যা, হাসনার পর ইয়াসমিন’ শিরোনামের সেই প্রতিবেদনের দিনই পরিচালক সুমন ধরের কাছে একটি অজানা নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসে। অপরিচিত নম্বর হওয়ায় তিনি ফোন ধরেননি। পরের দিন আরও একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। দুদিন পর তাঁর একটি ওয়েব ফিল্মের শুটিং থাকায়, টেকনিশিয়ান ভেবে ফোনটি ধরেন।
পরিচালক সুমন ধর জানান, ‘ফোনে কথা বলার পর বুঝলাম, কলটি চিত্রনায়ক জায়েদ খানের। আগের দিনও তিনি ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে জানালেন, “হারুন (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ) ভাই আপনাকে ডেকেছেন, তাই আমার সঙ্গে ওখানে যেতে হবে।” আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, হারুন ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরদিন আমি ডিবি অফিসে গেলাম, কয়েক মিনিট পর জায়েদ ভাইও সেখানে এলেন। হারুন সাহেব এবং তাঁর টিম আমাকে বললেন, “আপনি ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ সিনেমাটি করছেন?” উত্তরে আমি বললাম, হ্যাঁ, করছি। তখন তিনি বললেন, “এই ছবিটি করা যাবে না। আমাদের কাছে আরও শক্তিশালী গল্প আছে, সেগুলো থেকে আপনার জন্য ভালো একটি গল্প দেব।”
সুমন আরও জানান, তিনি তখন হারুনকে বলেন, “এই ছবিটি করতে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি, ২০১৭ সাল থেকে কাজ করছি। যেহেতু এটি একটি সত্য ঘটনা, তাই অনেক গবেষণার পর সিনেমাটির প্রি-প্রোডাকশন করেছি। প্রযোজকের পাশাপাশি আমারও অর্থ বিনিয়োগ আছে।” এরপর হারুন সাহেবের সহকারীকে ডেকে বলেন, “আমাদের কাছে ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করুন। আর সুমন যদি স্পন্সরের প্রয়োজন করে, আমরা জোগাড় করব।”
এরপর সুমন জানান, হারুন অর রশীদ অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গেও কথা বলতে চান, যিনি সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সুমন বলেন, “হারুন সাহেব মিমকে ফোন করে বলেন, ‘এই ছবিটি হবে না, বুঝেছ?’” মিম তখন ভারতে ছিলেন এবং এই ফোন কল পেয়ে খুবই অবাক হয়েছিলেন। মিম জানান, এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করার সুযোগ সবসময় আসে না, তাই এমনটি হওয়ায় তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে হারুন অর রশীদের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ সিনেমার কাজ আবার শুরু হতে যাচ্ছে। পরিচালক সুমন ধর নিশ্চিত করেছেন, তিনি এই সিনেমাটি বানাবেন এবং প্রি-প্রোডাকশনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। সুমন বলেন, “প্রি-প্রোডাকশন ও শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তির কাজ শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই শুটিং শুরু হবে। বেশিরভাগ শুটিং আউটডোরে হবে, তাই পরিবেশ অনুকূল হলেই কাজ শুরু করব।”
১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় ১৬ বছর বয়সী কিশোরী ইয়াসমিন আক্তারকে পুলিশ একটি ভ্যানে করে জোরপূর্বক তুলে নেয়। পরদিন সকালে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনা দিনাজপুরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন। পুলিশ সেই আন্দোলনে গুলি চালালে সাতজন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে।
হারুন অর রশীদ বর্তমানে পলাতক এবং চিত্রনায়ক জায়েদ খান কানাডায় অবস্থান করছেন। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জায়েদ খান স্বীকার করেছেন, তিনি সুমন ধরকে সিনেমাটি না বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।