৮৬টি দোকান পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ৫৫টি পাহাড়ি মালিকদের এবং বাকিগুলো বাঙালিদের। এছাড়াও ২৬টি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে।
শুধু আগুনই নয়, লুটপাটও হয়েছে। স্টুডিও অনুকা থেকে তালা ভেঙে ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, আইপিএস এবং কম্পিউটার মনিটর চুরি করা হয়েছে।
লারমা স্কয়ারের ধ্বংসস্তূপ. ২০ সেপ্টেম্বর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ি জোনের একটি টহল দল একজন মুমূর্ষু রোগীকে স্থানান্তরের সময় স্বনির্ভর এলাকায় পৌঁছালে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোড়ে। এই সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হন।
গতকাল ঘটনাস্থলে দেখা যায়, দোকানিরা তাঁদের পুড়ে যাওয়া দোকানে ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ৮৬টি দোকান পুড়ে গেছে, যার মধ্যে ৫৫টি পাহাড়িদের এবং বাকিগুলো বাঙালিদের। এছাড়া ২৬টি দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে জানান, সেদিন দুই পক্ষের সংঘর্ষের একপর্যায়ে লারমা স্কয়ারে আগুন ধরানো হয়। এতে শতাধিক ভাসমান দোকান এবং ৮৬টি স্থায়ী দোকান পুড়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
সমর বিকাশ তাঁর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সেই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘পাহাড়িরা উপজেলা পরিষদের দিকে ছিলেন, আর বাঙালি ও সেনাসদস্যরা লারমা স্কয়ারের দিকে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছিল। একপর্যায়ে আমার দোকানের পাশে আগুন লাগানো হয়। কোনো রকমে স্ত্রীসহ বের হয়ে আসি। সবকিছু পুড়ে গেছে। আমার চার লাখ টাকা ঋণ আছে।’
লারমা স্কয়ারের রাস্তার দুই পাশের দোকানগুলো পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কাছেই ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ছিল, কিন্তু আগুন নেভানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। ইউএনও মামুনুর রশীদ জানান, এই ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি টাকারও বেশি।
দিদারুল আলমের হার্ডওয়্যার দোকান এবং আকতার হোসেনের সার ও কীটনাশকের দোকানও পুড়ে গেছে। আকতারের ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। দিদারুল আলম বলেন, ‘আমার দোকান বন্ধ ছিল। খাগড়াছড়ি সদরে যাচ্ছিলাম, পথে ফোনে খবর পাই যে আমার দোকানে আগুন লেগেছে। সব শেষ হয়ে গেছে। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
লারমা স্কয়ারের কিছু দোকান গত ৩ এপ্রিল বৈদ্যুতিক গোলযোগে আগুনে পুড়ে গিয়েছিল, যার মধ্যে দীপন চাকমার রেস্তোরাঁও ছিল। পরে তিনি কাঠের ফ্রেমে দোতলা রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেল তৈরি করেছিলেন। সেই দোকানসহ তাঁর ব্যক্তিগত অটোরিকশা এবং নিচে রাখা সাতটি মোটরসাইকেলও পুড়ে গেছে।
দীপন চাকমা বলেন, ‘মিছিলের এক পর্যায়ে মাইকে ঘোষণা হয়, আক্রমণ হচ্ছে। তখন লোকজন বিভিন্ন জায়গা থেকে বের হয়ে এসে আগুন লাগায়। আমি দোকানের শাটার বন্ধ করে ভেতরে ছিলাম। আগুন দেওয়ার পর বের হলে আমাকে মারধর করা হয়।’
শুধু আগুন নয়, লুটপাটও হয়েছে। স্টুডিও অনুকা থেকে তালা ভেঙে ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, আইপিএস এবং কম্পিউটার মনিটর চুরি করা হয়েছে। নিউক্রয় চাকমার চায়ের দোকানের আসবাবপত্রও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
দীঘিনালা উদোলবাগান এলাকায় ধনঞ্জয় চাকমার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছোট ছেলে দীপন জানায়, তার বাবা সেদিন মাইনি ব্রিজের কাছে ছিলেন, সেখানে তাকে মারধর করা হয় এবং পরে গাড়িতে তুলে কিছু দূর নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। দোকানপাট খুলেছে এবং মানুষের চলাচলও বেড়েছে।