আইয়ুব বাচ্চু নেই, এলআরবির অন্যরা কে কোথায়

0
59

আইয়ুব বাচ্চু এবং তার স্বপ্নের ব্যান্ড এলআরবি বাংলাদেশের সংগীত পরিবারে একটি অবিস্মরণীয় নাম। তাদের সঙ্গে যুগান্তরের ধারাবাহিকতা এবং অপার ভালোবাসা রয়েছে। এলআরবি ব্যান্ডের সফর দেশ-বিদেশের মঞ্চে সন্তুষ্টতা ও স্বপ্নের পরিপ্রেক্ষিতে চলছে। আইয়ুব বাচ্চু গিটার বাজাতে প্রিয় এবং তার উত্সাহী অনুগামীদের জন্য পরিচালনার সামনে গোষ্ঠী বলে রাখেন। তার মৃত্যুর পরও, তার গিটারের মহৎ মানসিকতা এখনো সংগীতপ্রেমীদের সম্মোহনে অবিচ্ছেদ্য রূপে অবস্থিত। এলআরবি ব্যান্ডের গান হলো অপেক্ষার মোহাজালে আটকে রাখা, তবে তারা তাদের সদস্যদের মধ্যে একটি অপেক্ষার ব্যক্তি হিসেবে সহযোগিতা নিয়ে আসতে পারেনি। এলআরবির ৩৩ বছরের প্রতিষ্ঠার দিনে, আইয়ুব বাচ্চু এবং তার দলের সদস্যরা একত্রে হাত মিলিয়ে উদ্যোগের মাতৃত্ব পায়। সূত্রের সন্তুষ্টিতে, এই শুরুতে আইয়ুব বাচ্চুর পাশে অন্যান্য সহযোগীরা সাথে থাকেন।

পরের দিনে, আরও অনেকে যোগ দেন। কেউ এক যুগ, এক দশক পর এসেও যোগ দেন। পথে অনেকটা পথ পার করে, একটা পরিবার হয়ে গেল অনেকে। আইয়ুব বাচ্চুকে ঘিরে গড়ে ওঠা এলআরবি ব্যান্ড দলটির কাজ থেমে গেল তাঁর মৃত্যুর মাঝে। এখন দলের সদস্যদের কোথায় এবং কোন কোন সঙ্গে কারো কোন যোগাযোগ নেই কেউ জানে না।

একসময় ছিল, যখন তাদের বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে কাটত। আড্ডা, জ্যামিং এ সবাই হাঁটতে। নতুন গান তৈরি করতে তাদের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুর মুখর সহায়তা ছিল।

প্রতিষ্ঠার এই দিনে, স্বপ্নের সঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর পথচলা শুরু করা এলআরবি সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের চেষ্টা হয়। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি দ্বারা প্রয়োজনে শামীম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি জানান, স্বপ্ন এখন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। অন্যদের কোন খবর নেই।

এলআরবি সদস্য আবদুল্লাহ আল মাসুদ সঙ্গে যোগাযোগ সংক্রান্ত কথা আছে। তিনি দলে যুক্ত হন ২০০৩ সালে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর আগের সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এখন তিনি সংগীত পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন এবং অন্য শিল্পীদের জন্য গান বানাচ্ছেন। তিনি বলেন, “বস (আইয়ুব বাচ্চু) না থাকলে সবই মূল্যহীন। বেশ কিছুদিন যাবৎ কারো সঙ্গে কারো কোন যোগাযোগ নাই। শুধু শামীম ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।”

ভাবির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আইয়ুব বাচ্চুর জীবন ও তার সৃষ্টিকর্মের চর্চা শুরু করেছি। অদূরভবিষ্যতে যদি কোনো মুখোমুখি পরিস্থিতি হোক, তখন রিইউনিয়নের মতো কোনো সাম্ভাবনা আছে কিনা তা বিবেচনা করেছি। কিন্তু ব্যান্ডের সম্প্রদায়ে একতা বা সংগঠনের সুযোগ আমরা সবাই বুঝি না পেয়েছি।

এলআরবি ব্যান্ড একটি বৃহত্তর নৌকা যেটি সংগীত জগতে আলোকিত হয়েছে। এই নৌকাটিকে ধারণ করে নিতে কেউ আর অবশ্যই নেই। যদিও বড় বৃহত্তর এই নৌকাটি একে নেয়া অসম্ভব হবে, কারণ এটি যে অবস্থানে রয়েছে, সেই অবস্থানটিই ব্যান্ডের জন্য আপনান্দময় এবং গানসুলভ। তাদের কর্তৃত্বে একটি বেঞ্চমার্ক রয়েছে, এবং এটি ধ্বংস করা হলে অস্তিত্বের অধিকার আমাদের কারো নেই। হয়তো আমাদের সামনে অনেক অনেক ব্যান্ডের উদাহরণ দেখা যাবে, কিন্তু এটা সত্যিই যে যে প্রজন্মের সাথে যারা সংগীতে জড়িত ছিলেন, তাদের একত্রে রাখা সম্ভব হয়নি।

দলের এক অন্য সদস্য রোমেল যে মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করত, তাও এখন বন্ধ করা হয়েছে। শামীম আহমেদ ব্যান্ডের শব্দ প্রকৌশলী হিসেবে ১৯৯৫ সাল থেকে যুক্ত হন। শেষে, আইয়ুব বাচ্চু তাঁকে দলের ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করেছেন। এখন শামীম যুক্তরাজ্যে আছেন। তিনি বলেন, “বাচ্চু ভাইয়ের ছেলে যদি একদিন ব্যান্ড চালাতে ইচ্ছুক হন, তাহলে দেখা যাবে। এলআরবি ব্যান্ডের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা অনেকের মতো আমি চিন্তা করেছি, তারা যা চান তা পেতে পারেনি। এটা আসলে কোন বিস্ময় নয়। তারা বাচ্চু ভাইয়ের সৃষ্টিকর্ম কে পার্থক্য করতে পারেনি। তিনি একটি ব্র্যান্ড।”

আমাদের প্রথম অ্যালবাম ‘এলআরবি ওয়ান’ এবং ‘এলআরবি টু’ মুখ্য বাজারে আসে। এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। পরবর্তীতে ‘আমাদের’ এবং ‘বিস্ময়’ নামের আরেকটি ডাবল অ্যালবাম বাজারে আসে। এলআরবির অন্য অ্যালবামগুলো হলো ‘সুখ’, ‘তবুও’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘ফেরারি মন’, ‘স্বপ্ন’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘অচেনা জীবন’, ‘মনে আছে নাকি নেই’, ‘স্পর্শ’ ও ‘যুদ্ধ’।

এলআরবির অ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘সুখ’ (১৯৯৩), ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘স্বপ্ন’ (১৯৯৬), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০০), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নেই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮) ও ‘যুদ্ধ’ (২০১২) উল্লেখযোগ্য।

ঠিকমতো, আমরা এই ব্যান্ড নিয়ে কাজ করতে না পারি, তাহলে তো হিতে বিপরীত। এর চেয়ে এলআরবির কাজ যেখানে শেষ হইছে, ওখানে রেখে দেওয়া উচিত। চালিয়ে নেওয়ার নামে নষ্ট করা উচিত না। এটা মোটেও সহজ কাজ না। অনেক ভক্ত প্রায়ই বলেও “আপনারা এলআরবি কেন করছেন না?” কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কেমনে করব, কী নিয়ে করব, আমরা তো সহযোগী ছিলাম মাত্র। এটা তো সত্যিই অসম্ভব।’ এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর অবর্তমানে এই ব্যান্ডের ভবিষ্যত কী হবে, তা নিয়ে পরিবারকেও একটা ধারণা দিয়ে গিয়েছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর কন্যা ফাইরুজ সাফরা প্রথম আলোকে এ বিষয়ে বলেছিলেন, ‘বাবা সব সময় বলতেন, “আমাকে ছাড়া এলআরবি চলবে না। আমার এই সম্পদের অধিকার শুধু তোমার আর তোমার ভাইয়ের।” বাবা একটা কথা সব সময় পরিষ্কার করে বলতেন, “আমি তোমাদের খুব গরিব বাবা। আমার অনেক সীমিত জিনিস। আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার ছেলে ও মেয়ে। জীবনে অনেক শ্রম দিয়ে তোমাদের লেখাপড়া করিয়েছি।” বাবার এই কথা আমি সব সময় মনে রেখেছি।’ তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘আমি না থাকলে, আমার কোনো জিনিসকে কখনো উল্টাপাল্টা হতে দিবা না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here