ইসরায়েলের অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান প্রস্তাবের প্রস্তাব পাস হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এই প্রস্তাবটির পক্ষে ২৮টি দেশের ভোট হয়েছে।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, সহযোগিতা সংস্থার পক্ষে পাকিস্তানের উদ্যোগে। এই প্রস্তাবের সাথে সংযুক্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশের প্রতি অস্ত্র বিক্রি, সামরিক সরঞ্জামের বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান।
এই প্রস্তাবে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে একাধিক আলোচনা সংঘটিত হয়েছে, যেখানে হামলা নিয়ে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ প্রস্তাবে উল্লিখিত হয়েছে গাজায় নতুন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে আহ্বান জানানোর জন্য। এছাড়াও গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি নিয়ে পূর্বেই অন্তর্জাতিক বিচার আদালতের রুলের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও এ প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ যেতে দেওয়ার জন্য, কারণ অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। মানবাধিকার পরিষদের সর্বোচ্চ পরিষদে প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটের আগে সুইজারল্যান্ডের নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত এই প্রস্তাবের সাথে একমত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই গণহত্যা বন্ধে আপনাদের সবার জেগে ওঠা প্রয়োজন। এটা এমন এক গণহত্যা, যেটা টেলিভিশনের পর্দায় পুরো পৃথিবী দেখছে।’
এই প্রস্তাবটি বিশেষজ্ঞদের মতে ইসরায়েলের অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর কার্যকারিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ভর করবে।
অস্ত্র না দেওয়ার হুঁশিয়ারি বাইডেনের
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় ত্রাণকর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বাইডেনের প্রথম সহায়তা ও অস্ত্র বন্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এটি ইসরায়েলের প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে একটি সূচনা। এই পদক্ষেপ প্রভাবশালী হওয়ার কারণে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন হোয়াইট হাউসের মতে, এই টেলিফোন আলোচনায় বাইডেন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে, মানুষের দুর্দশা কমাতে ও ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলকে বিশেষ, সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। মার্কিন নীতি নির্ভর করে ইসরায়েল কতটা পদক্ষেপ নিয়েছে তা প্রভাবিত হবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বন্ধুত্বে কিছু দিন ধরে টানাপোড়েন চলছে। হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, টেলিফোন আলোচনায় বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে আলোচনা হয়েছে প্রায় ৩০ মিনিট।
ইসরায়েলের সর্বাধিক বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের অনেক সময় ইসরায়েলের কূটনৈতিক দিকটির ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে, ইসরায়েল ও গাজায় যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ নীতিগত পরিবর্তন এনে তোলবে কিনা, এ সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক তথ্য উল্লেখ করেননি। ওয়াশিংটন অপেক্ষা করছে ইসরায়েলের পদক্ষেপের ঘোষণা প্রত্যাশা করে।
হোয়াইট হাউসের আরও বক্তব্যে উল্লিখিত হয়, বাইডেন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
যুদ্ধে হারছে ইসরায়েল: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, ইসরায়েল যে যুদ্ধ করছে সেই যুদ্ধে তারা হেরে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প অবিলম্বে এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের কাছে, ইসরায়েল প্রতি রাতে ভবন ধসে পড়ার ফুটেজ প্রকাশ করছে। তিনি মনে করেন যে, এই যুদ্ধে ইসরায়েল জনসংযোগের মাধ্যমে হারছে। জনসংযোগের মাধ্যমে করা এই যুদ্ধে তারা সম্পূর্ণরূপেই পরাজিত হচ্ছে মনে করেন তিনি।