৬১ কেজি সোনা চুরি

0
52

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক ঘটনা তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে, যেখানে শুল্ক বিভাগ থেকে প্রায় ৬১ কেজি সোনা চুরির ঘটনা সন্দেহ রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এখনো কোনো অগ্রগতি অর্জন করেননি। তাদের পক্ষ থেকে মামলা তদন্ত চলছে এবং তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পরেও চুরি হওয়া সোনা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি।

এই ঘটনা সম্পর্কে আগস্টের শেষ দিকে জানাজানি হয়েছিল এবং সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার করে। তারা ছিলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মাসুদ রানা, আকরাম শেখ, সিপাহি রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন এবং নিয়ামত হালদার। তাঁদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন পালায় গুদামের দায়িত্ব পালন করতেন।

এই ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তাদের তদন্তে অংশগ্রহণের পর শুল্ক বিভাগের লোকজনও যুক্ত হয়েছিলেন। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট প্রধান মুখোশ ছিলেন এবং তাদের অবদানও তদন্তের সাথে ছিল।

পিবিআই গত বছরের সেপ্টেম্বরে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেলেও তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সোনা চুরির ঘটনা স্বীকার করলেও আদালতে অস্বীকার করে। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চুরির ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা গেছে। সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলামের মধ্যে লকারের দায়িত্বে থাকা সঙ্গে জড়িত হওয়া স্পষ্ট হয়েছে, এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও সঙ্গে জড়িত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিবিআইর অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনার সংগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনার পরিণতি দেওয়ার পর তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে এসেছেন।

এই অবস্থার কারণ জানতে চাইলে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে কোনো কথা বলার পরামর্শ দেননি। তিনি বক্তব্য নেওয়ার পরামর্শ দেন।

‘ঘটনা ধামাচাপ দেওয়ার চেষ্টা’

প্রাপ্ত তথ্যাদি অনুযায়ী, সোনাগুলো জুলাই ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে গুদামে সংরক্ষিত ছিল। এই সোনা গুদামে এতদিন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল এবং নিয়মানুযায়ী, প্রতি মাসে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেওয়া হতো এবং এই সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেওয়া হতো। তবে এই পদ্ধতি অনুযায়ী করা হয়নি। তারপর সোনা চুরির ঘটনা জানানোর পরে ঢাকা শুল্ক বিভাগের অতিরিক্ত কর্মকর্তারা বাইরে থেকে সোনা কিনে লকারে রেখে চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

তবে, এই ধামাচাপা করা হয়নি বলে অস্বীকার করেছেন ঢাকা শুল্ক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী ফরিদ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, “এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”

মালিকানার দাবিহীন সোনা নিয়ে মাথা না ঘামানোর পরামর্শ

ঢাকা শুল্ক বিভাগের তদন্তে সোনা চুরির ঘটনায় যে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম দুই বছরের বেশি এবং সাইফুল ইসলাম দেড় বছরের মতো এই দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সাধারণত এই দায়িত্বে এক বছরের বেশি কাউকে রাখা হয় না।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেপ্তার আটজন আসামিকেই রিমান্ডে এনে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এদের একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আকরাম শেখ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা শুল্ক বিভাগে যোগ দেন। এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে বিমানবন্দরের ভেতরে থাকা ঢাকা শুল্ক বিভাগের গুদামের রক্ষাণাবেক্ষণ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্য জায়গা থেকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানাকেও একই দায়িত্বে বদলি করা হয়।

আকরাম শেখ দায়িত্ব নেওয়ার পর জব্দ করা সোনা কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হয়, তা শিখতে চান। এ ছাড়া আগে থেকে দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ও শহিদুলকে জব্দ করা সোনা ও বিদেশি মুদ্রা আটকের নথি (ডিএম) অনুযায়ী বুঝিয়ে দিতে বলেন। তখন তাঁরা আকরামকে বলতেন, ডিএম অনুযায়ী মালামাল না মিললে দুজনে মিলিয়ে দেবেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আকরাম পিবিআইকে আরও জানান, লকার যে গুদামে রয়েছে, তার চাবি থাকত সাইফুল ও শহিদুলের কাছে। ডিএম অনুযায়ী ২০২০ সালে জব্দ হওয়া কিছু মালামাল লকারে কেন, সে বিষয়ে দুজনের কাছে জানতে চান আকরাম। তখন আনক্লেইমড (মালিকানার দাবিহীন) সোনা ও মালামাল নিয়ে আকরামকে বেশি মাথা না ঘামানোর পরামর্শ দেন সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিমানবন্দরের গুদামের মালামালের তালিকা করা শুরু হলে তাঁরা দুজনে মিলে চুরির নাটক সাজান বলে সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা জানান।

আকরাম শেখ দায়িত্ব নেওয়ার পর জব্দ করা সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম জানতে চায়। এছাড়াও, এই দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাইফুল ও শহিদুলকে জব্দ করা সোনা এবং বিদেশি মুদ্রার আটকের নথি (ডিএম) অনুযায়ী বুঝিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। তখন তাঁরা আকরামকে বলেন, ডিএম অনুযায়ী মালামাল না পাওয়ার সময়ে তিনি দুজনের মিলে সাহায্য করতে পারেন।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আকরাম পিবিআইকে আরও জানতে চাচ্ছেন, লকারে কোন গুদামে সোনা সংরক্ষণ করা হয়, তার চাবি সাইফুল ও শহিদুলের কাছে থাকে। ডিএম অনুযায়ী ২০২০ সালে জব্দ করা কিছু মালামালের কারণ জানতে চায় আকরাম। তখন সাইফুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম বলেন, যে সোনা এবং মালামাল জব্দ হয়েছিল সেগুলি কোন দাবি না পেলে আকরাম তাদের সাহায্য করতে পারেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিমানবন্দরের গুদামের মালামালের তালিকা তৈরি করার সময়, তাঁরা দুজনে একসাথে কাজ করে চুরির পরিকল্পনা বিতর্কিত করেছিলেন বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here