বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের পরিবর্তনের হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করেছে, যা হল ১১৭ টাকা। এই দরের আশপাশে ব্যাংকগুলোকে ডলার বিনিময় করতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার পরামর্শ দিয়ে আসছে। আইএমএফের চাওয়া, বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হার বাজারভিত্তিকভাবে নির্ধারণ করতে চাইছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পূর্বে বৈদেশিক মুদ্রার দাম নির্ধারণ করেছিল, তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংকভিত্তিক সংগঠন ডলারের দাম নির্ধারণ করেছে। সর্বশেষে তারা ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকায় নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে অনুসারে, গতকাল বুধবার থেকেই মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ডলারের জন্য ‘ক্রলিং পেগ মিড-রেট’ (সিপিএমআর) নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন থেকে আন্তব্যাংক ও গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেনে তফসিলি ব্যাংকগুলো সিপিএমআরের আশপাশে মার্কিন ডলার ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। নতুন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ডলারের দাম একটা সীমার মধ্যে বাড়বে বা কমবে। ফলে ডলারের দাম একবারে খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চসীমা ও নিম্নসীমা নির্ধারণ না করে মধ্যবর্তী সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ডলারের লেনদেনের ক্ষেত্রে এই দরের আশপাশে থাকতে বলা হয়েছে।
এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুসারে, ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হলো একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। এ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, ব্যাংকগুলো এখন থেকে ১১৭ টাকার নিচে বা ওপরে ডলারের কেনাবেচা করতে পারবে, তবে এই দরের চেয়ে খুব বেশি কম বা বেশি দামে ডলারের লেনদেন করা যাবে না। প্রতিদিন কত দামে ডলার কেনাবেচা করছে, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জানিয়ে দিতে হবে।
ক্রলিং পদ্ধতি চালুর ফলে চলমান ডলার-সংকট অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এখন থেকে ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা বা এবিবির কার্যত কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালুর কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কীভাবে এই পদ্ধতি চালু হবে, তা নিয়ে আইএমএফের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মার্চের মধ্যে এই পদ্ধতি চালু করার কথা বললেও মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিল। আইএমএফের একটি দল এখন বাংলাদেশ সফর করছে।