সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দেশে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার কমাতে পারছে না। দেশে বর্তমানে অর্ধেকের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ অস্ত্রোপচার হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়াই।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২৩ সালের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস ২০২৩) প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশে অস্ত্রোপচারে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই হার গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের চেয়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গত বছর অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মের হার ছিল ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ।

সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক সমাজের মধ্যে সমানভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে না উঠলে এই অশুভ প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।

অধ্যাপক রওশন আরা বেগম, স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ

অস্ত্রোপচারে শিশু জন্ম বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে স্বাভাবিক প্রসবে শিশু জন্ম কমে যাওয়া। ২০২২ সালে স্বাভাবিক প্রসবে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছিলে। এক বছর পর ২০২৩ সালে স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম হয়েছে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিশুর। অর্থাৎ ৯ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাভাবিক প্রসব কমেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেকোনো জনগোষ্ঠীতে নানা কারণে কিছুসংখ্যক গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবে মা বা শিশুর বা উভয়ের জীবনের ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। অস্ত্রোপচার জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থার দরকার হয়।

তবে ৫০ শতাংশের বেশি অস্ত্রোপচারকে বিপজ্জনক প্রবণতা বলে বর্ণনা করছেন মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটির (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা বিপজ্জনক প্রবণতা। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে অডিট করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে ও ক্লিনিককে লেবার রুম প্রটোকল (প্রসবঘর নীতিমালা) মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিকে এটি মানা হয় না।’

রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২৩ সালের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (এসভিআরএস ২০২৩) প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, দেশে অস্ত্রোপচারে ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই হার গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের চেয়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি
অধ্যাপক রওশন আরা বেগম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কিছু নিয়মনীতি মানা হয়, তবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সম্পর্কে সব সময় নিয়মনীতি ঠিকমতো অনুসরণ হয় না।

গতকাল বিবিএস প্রকাশ করেছে, অস্ত্রোপচারে জন্ম নেওয়ার হারে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনেকেই বেশি ব্যবহার করেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সময়ের সাথে নিয়মনীতি মেনে চলা সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আসে।

২০২২ সালের বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য থেকে প্রকাশ হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বেশি অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার (এনজিও) স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তুলনামূলকভাবে কম হারে অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম ঘটছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেকোনো জনগোষ্ঠীতে নানা কারণে কিছুসংখ্যক গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবে মা বা শিশুর বা উভয়ের জীবনের ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকি এড়াতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। অস্ত্রোপচার জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থার দরকার হয়।

অস্ত্রোপচারের ক্ষতি

দেশে অস্ত্রোপচারের হার অত্যন্ত উচ্চ, এবং এটির পরিণামে অপ্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্ত্রোপচার হচ্ছে। তবে অনেক সন্তান এই প্রক্রিয়ার প্রয়োজনতার বাহিতে নয়। এ মাধ্যমে মাতার এবং শিশুর স্বাস্থ্যে ক্ষতি ঘটে এবং যেসব অপ্রয়োজনীয় সাইড-ইফেক্ট হতে পারে, সেগুলি সম্পর্কে চিন্তা করা দরকার।

অস্ত্রোপচারের একটি মূল ক্ষতি স্বাস্থ্যের দিকে। এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে দৃশ্য অসুস্থতা এবং প্রসবের পরিণামগুলির ক্ষতি বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও, অস্ত্রোপচারে খরচ অত্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতি প্রভাব ফেলতে পারে।

৫০ শতাংশের বেশি অস্ত্রোপচারকে বিপজ্জনক প্রবণতা বলে বর্ণনা করছেন মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ

শিশু জন্মে অস্ত্রোপচারের হারের বৃদ্ধি একটি চিন্তাজনক সত্যিকার ঘটনা। সাম্প্রতিক অবস্থায় এই হার চলমান প্রতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলিত। কিন্তু এই প্রবণতা বৃদ্ধি করতে প্রতিষ্ঠানিক ও সামাজিক উপায়গুলির অভাব একেবারেই সাম্প্রতিক সমাজের সচেতনতা বাড়ানোর দরকার প্রমাণ করে।

শিশু জন্মে অস্ত্রোপচারের হারের এই চোখের নজরে সকল বাস্তব সামগ্রী বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানিক বা সামাজিক নীতি ও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য, বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনা। একইসাথে, সামাজিক সচেতনতার অভাব এই ধরণের অশুভ প্রবণতা থেকে সাধারণ মানুষের সন্ত্রস্ত স্বাস্থ্য ও সমাজের মাধ্যমে প্রতিরোধ গঠনে বাধা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here