পবিত্র রমজানে মেট্রোরেলে ভ্রমণের হার কমে গিয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা ও প্রত্যাশা, পবিত্র রমজানের শেষ দিনে, যখন মানুষের শপথ শেষ অর্ধে বাজারে বের হলে, যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। এই সময়ে, ১৬ রমজান থেকে, অর্থাৎ আগামী বুধবার (২৭ মার্চ) রাত ৯টার পর পরেও, মেট্রোরেল চালিত রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের দ্বারা।
ঢাকায় মেট্রোরেল পরিচালনা ও নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, পবিত্র রমজানের ১৬তম রোজার দিন মতিঝিল থেকে সর্বশেষ ট্রেন সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এবং উত্তরা থেকে সর্বশেষ ট্রেন সকাল ৯টা ২০ মিনিটে প্রস্থান করবে। আগামী সপ্তাহে বাড়তি সময়ে ১২ মিনিট পর পরে ট্রেন চলাচল করবে। এটি মানে আসবে, ট্রেনের সংখ্যা ১০টি বাড়বে। এই নতুন পদক্ষেপে দিনে মোট ১৯৪ বার ট্রেন প্রস্থান করা হবে। এছাড়া, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন মেট্রোরেল পরিচালনা সাংস্কৃতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত করে নিলেও, এবারের পরিকল্পনা মেট্রোরেল চালু থাকার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএমটিসিএল।
ডিএমটিসিএল এর তথ্যাধিকার অনুযায়ী, রমজানের শুরুর ১৫ দিনে প্রতিদিন গড়ে পৌনে তিন লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু রমজানের শুরুর পর দিনে গড়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করছেন। মেট্রোরেল পরিচালকদের মতে, রমজানের শেষ অর্ধে যাত্রীসংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এছাড়াও, চলাচলের সময় বাড়ানোর পরিণামে, যাত্রীর চাপ আগের থেকে বেশি হতে পারে। আর ঈদের পর বাড়তি যাত্রী অব্যাহত থাকলে, এপ্রিলে দুটি ট্রেনের মধ্যে চলাচলের সময়ে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করা তাদের লক্ষ্য। তারা চালুর পর থেকেই যাত্রী চলাচলের ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দুটি ট্রেনের সময় কমিয়ে আনছেন। একেবারে পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করার জন্য তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান করা মাধ্যমে আয় করছেন এবং তাদের জন্য সরকার থেকে কোনো সাহায্য প্রাপ্ত করছেন না। এমনকি, মেট্রোরেল পরিচালনা এবং বিদ্যুতের খরচ সঠিকভাবে হিসাবে আনার জন্য তারা গুরুত্ব দেন। তবে, যদি যাত্রী না বাড়িয়ে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হয়, তাহলে লোকসান বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
রোজা ধরনের উপলক্ষে ইফতারের সময়ের আগে-পরে মেট্রোরেল ভ্রমণের সময় ২৫০ মিলিলিটার পরিমাণের পানির বোতল বহন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের দ্বারা। তবে, পানি পানের পর বোতলটি অবশ্যই নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে, যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। এছাড়াও, ট্রেনের ভিতর ও বাইরে পর্দায় (এলইডিসি স্ক্রিন) ইফতারের সময়সূচি প্রদর্শিত হচ্ছে।
রমজান মাসে, ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাস ধারকদের জন্য ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ‘পেইড জোনে’ অবস্থান করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রমজান মাসে, যাত্রীরা ক্লান্ত হতে পারে এবং তাদের জন্য পেইড জোনে কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করার পর থেকে ৭৫ মিনিট থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে। পূর্বে এই সময়টি ৬০ মিনিট ছিল।
রোজা অবধি মেট্রোরেলের চলাচল একটি নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। ইফতারের আগে যাত্রীরা পানি বহন করার জন্য সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পানি পান করার পর বোতল বিশেষ জায়গায় ফেলতে হবে। এটি সম্প্রতি বেশ কিছু অসুবিধা সমাধানের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ।
রমজান মাসে, ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পাসধারীদের জন্য আপগ্রেড প্রদান করা হয়েছে। এখন পাসধারীদের জন্য পেইড জোনে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং এই জোনে আটকে থাকার সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইফতারের সময়ে।
ডিএমটিসিএলের প্রতিষ্ঠানিকদের দ্বারা বলা হয়েছে, যাত্রীদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা প্রতিরক্ষা পদক্ষেপের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। এ ধরনের সতর্কতা নিশ্চিত করার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনবার সতর্কবাণী প্রচারিত হবে এবং যদি পানি বা অন্যান্য কোনো ব্যবস্থা পালন করতে অসমর্থ হতে পারে, তাহলে চলাচল সত্ত্বেও স্থগিত করা হবে।
মেট্রোরেলের চলাচলে বিভিন্ন সময়ে সাময়িক বন্ধ হওয়ার কারণে পাঁচেশ মিনিট অতিক্রম করা হয়েছে। বিদ্যুতের গোলযোগ, ফানুসের পড়া, তারপরী সমস্যা ইত্যাদির সাপেক্ষে মেট্রোরেল চলাচল সময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে দায়িত্বশীল মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সচেতনতা ও প্রতিবেদনের গুরুত্ব প্রকাশ করে এমন সূত্র জানা গেছে।
বর্তমানে, মেট্রোরেল প্রকল্পের অধিকাংশ স্থানে স্বনিযুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক স্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার আছে যাতে একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে চালু হতে পারে। এর ফলে, যেখানেই বিদ্যুৎ-সংকট হোক না কেন, ট্রেন চলাচল বন্ধ হবে না।
ডিএমটিসিএলের এমডি এম এন সিদ্দিক এই বিষয়ে প্রথম আলোকে দাবি করেন, বেশির ভাগ চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে যাত্রীদের ভুলে। এই সমস্যা সমাধানে যাত্রীদের সহযোগিতা ও সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।